সীমান্তে হত্যা কমে এসেছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
গত ১০ বছরে বিএসএফের গুলিতে ২৯৪ বাংলাদেশির নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কমে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য আসার দিনই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলি দুজন নিহত এবং বেনাপোল সীমান্তে একজন আহত হন।
ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের মৃত্যু বহু দিন ধরেই আলোচিত; আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তা নিয়ে সোচ্চার। সমালোচনার মুখে ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনতে সীমান্ত রক্ষীদের হাতে এমন অস্ত্র দেওয়ার প্রতিশ্র“তিও দিয়েছে, যাতে কারও মৃত্যু ঘটবে না। কিন্তু তাতেও সীমান্তে হত্যা থেমে নেই।
সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবঞ্জে বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সীমান্তে হত্যার বছরওয়ারি হিসাব জানতে প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সাল থেকে গত ১০ বছরে সীমান্তে বিএসএফের হাতে ২৯৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
এরমধ্যে ২০০৯ সালে ৬৬ জন, ২০১০ সালে ৫৫ জন, ২০১১ সালে ২৪ জন, ২০১২ সালে ২৪ জন, ২০১৩ সালে ১৮ জন, ২০১৪ সালে ২৪ জন, ২০১৫ সালে ৩৮ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ১৭ জন, ২০১৮ সালে ৩ জনের মৃত্যুর হিসাব দেওয়া হয় সংসদে।
নিহতের সংখ্যা ২০১৮ সালে ৩ জনে কমে আসার বিষয়টি তুলে ধরে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় অনেকটা কমে এসেছে। সীমান্তে হত্যা বন্ধে বিজিবি ‘সর্বাত্মক প্রচেষ্টা’ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সরকারও কূটনৈতিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংসদে আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, ৩০ জুন পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ৮ হাজার ৮৪৮ জন বাংলাদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কারাগারে বা বন্দিশিবিরে রয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি তালিকাও উপস্থাপন করেন মন্ত্রী।
মোমেন বলেন, কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিদেশি কারাগারে আটক বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম দায়িত্ব। এটা রুটিন মাফিক মন্ত্রণালয় দূতাবাসের সাহায্যে করে আসছে।
স¤প্রতি ইন্দোনেশিয়া, তিউনিশিয়া, লিবিয়া ও ভানুয়াতু থেকে আটকে পড়া অনেক বাংলাদেশিকে দূতাবাসের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলেন মন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল জানান, ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সুন্দরবনে ৩২টি বাহিনীর প্রধানসহ ৩২৮ জন জলদস্যু/বনদস্যু ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদসহ র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
তিনি বলেন, র্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বনদস্যু ও জলদস্যুসহ অপরাধীরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। সরকারের নির্দেশনায় র্যাবের মাধ্যমে বনদস্যু/জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে প্রধানমন্ত্রী ‘জলদস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী তহবিল থেকে ২৭৪ জনকে ১ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেন বলেও জানান তিনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে জানান, ২০০৬ সাল থেকে জুন ২০১৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন অবস্থায় এক হাজার ৫০ জন পুলিশ সদস্য নিহত ও চার হাজার ৪৪০ জন আহত হয়েছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সব সংস্থা ২০১৮ সালে এক লাখ ৬১ হাজার ৩২৩ জন মাদক বিক্রেতার বিরুদ্ধে এক লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮টি মামলা করে বলে সংসদে তথ্য দেন মন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, গত ১০ বছরে (২০০৯ হতে ২০১৮ পর্যন্ত) বিজিবি সীমান্তে ৫৭টি রিভলবার, ৪৮৩টি পিস্তল, ৪০২টি বিভিন্ন প্রকার আগ্নেয়াস্ত্র, ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ৪৪৩ বোতল ফেন্সিডিল, এক লাখ ৫৪ হাজার ১০৯ কেজি গাঁজা, ১৬ লাখ ১১ হাজার ২৪২ বোতল বিদেশি মদ, এক লাখ ৪৩ হাজার ১৮ লিটার দেশি মদ, তিন লাখ ৫ হাজার ৫৫৯ বোতল বিয়ার, ৩৬৭ কেজি হেরোইন, ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৪০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, তিন লাখ ৮৫ হাজার ১৫৬ টি নেশার ইনজেকশন, ৩ কেজি আফিম, সাড়ে ৮ কেজি কোকেন আটক করেছে। এছাড়া অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমকালে তিন হাজার ৮৫৫ জন নারী ও এক হাজার ৫৯১ শিশুকে উদ্ধার এবং ১০৮ জন পাচারকারীকে আটক করেছে বিজিবি।