সিনহা হত্যা: চার পুলিশসহ ৭ জন রিমান্ডে
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার মামলায় আত্মসম্পর্ণ করা চার পুলিশ সদস্য এবং ওই ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাবের হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহ বুধবার রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
সিনহার বোনের দায়ের করা মামলার আসামি কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়াকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন বিচারক।
এই চার আসামিসহ সাতজন পুলিশ সদস্য গত ৬ অগাস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলি এবং এসআই দুলাল রক্ষিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিলেন বিচারক।
সাফানুর, কামাল, মামুন ও লিটনকে তখন রিমান্ডে না পাঠিয়ে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী একদিন তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল।
পরে ওই চারজনকে রিমান্ডে নিতে আবারও র্যাবের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে বিচারক ১২ অগাস্ট শুনানির দিন রাখেন। সে অনুযায়ী বুধবার তাদের আদালতে তোলা হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আ্যাডভোকেট রাখাল মিত্র বলেন, “র্যাব চারজনের দশদিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছিল। শুনানি শেষে বিচারক সাত দিন মঞ্জুর করেছেন।”
এদিকে পুলিশের গুলিতে সিনহার নিহতের ঘটনায় টেকনাফ থানায় পুলিশ যে মামলা করেছিল, তার তিন সাক্ষীকেও বুধবার আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে র্যাব।
বিচারক তামান্না ফারাহ শুনানি শেষে মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন র্যাবকে।
টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা ওই তিনজনককে সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আশিক বিল্লাহ মঙ্গলবার বলেন, “তারা এই ঘটনার মামলায় পুলিশের করা সাক্ষী ছিল। হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।”
কক্সবাজারে তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের উত্তরার বাসায় খোলা হয়েছে শোক বই।
দুই বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া সিনহা রাশেদ ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গত প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের দুই শিক্ষার্থী শাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা রাশেদ। ওই সময় তার গাড়িতে সিফাত ছিলেন।
সিনহা নিহতের ঘটনায় এবং গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের অভিযোগে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ, যাতে সিনহা এবং তার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আসামি করা হয়।
আর তারা যেখানে থেকে কাজ করছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে গ্রেপ্তার করার সময় মাদক পাওয়া যায় অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে রামু থানায় আরেকটি মামলা করা হয়।
এর মধ্যে সিনহা নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নুরুল আমিন, নেজামুদ্দিন ও আয়াজকে সাক্ষী করা হয়েছিল।
পুলিশের করা এই তিন মামলার পর গত ৫ অগাস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতসহ নয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য ৬ অগাস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
আদালতের নির্দেশে এই চারটি মামলায়ই এখন তদন্ত করছে র্যাব। পুলিশের তিন মামলায় গ্রেপ্তার সিফাত ও শিপ্রাকেও ইতোমধ্যে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।