সাধারণ মানুষ একেবারেই সাধারণ হয়ে গেছে : ফখরুল
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
শাসকগোষ্ঠি সচেতনভাবে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, যে রাষ্ট্র আমরা তৈরি করেছি সেই রাষ্ট্রের মানু্ষরে কোনো অধিকার নেই, সাধারণ মানুষ একেবারেই সাধারণ হয়ে গেছে।
যে চিন্তা নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছি ১৯৭১ সালে, সেই চিন্তা-চেতনা, সেই ধারণাগুলো সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আজকে যারা শাসকগোষ্ঠি, তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে এই রাষ্ট্রকে অকার্য্কর রাষ্ট্রে পরিণত করছে।
ভিন্নমতের ওপর সরকারের দমন-পীড়নের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দুঃখ হয় যখন দেখি যে, আমাদের গুণী মানুষ যারা রয়েছেন তাদেরকে শুধু কথা বলার কারণে কারাগারে পাঠানো হয়। যদিও তারা রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন না। যারা লেখেন, কথা বলেন বা যারা শুভ চিন্তা ও সত্যকে সামনে নিয়ে আসতে চান তাদেরকেও এখন একইভাবে পর্যুদস্ত করা হচ্ছে, নিপীড়ন করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে।
সদ্য প্রয়াত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনিরুজ্জামান তালুকদার স্মরণে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। গত ২৮ ডিসেম্বর অ্যাপেলো হাসপাতালে মারা যান তালুকদার মনিরুজ্জামান । গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ফখরুল স¤প্রতি প্রথম আলোর সম্পাদকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির উদাহরণ টানেন।
মোহাম্মদপুরে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে গত ১ নভেম্বর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় নবম শ্রেণির ছাত্র আবরার রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলায় গত ১৬ জানুয়ারি এই পরোয়ানা জারি করে আদালত।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান সাহেব। আপরাধ কী? অপরাধ যে মাঝে মাঝে তিনি কিছু লিখতেন, তার পত্রিকায় কিছু সত্য কথা বেরুতো। এজন্য একটি হত্যা মামলার সঙ্গে জড়িত করা হয়েছে, তাকে প্রধান আসামি করে প্রথম আলোর নয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
ঠিক একইভাবে মাহমুদুর রহমান সাহেবের (দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক) পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং তাকে দীর্ঘকাল কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। যে-ই ভিন্নমত পোষণ করতে চায়, ভিন্ন কথা বলতে চায়, এখন তাকে নিশ্চিহ্ন করা, নির্মূল করা অথবা স্তব্ধ করে দেয়ার কাজ চলছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এর মধ্যে উঠে দাঁড়াতে হবে, এর মধ্যেই তো কথা বলতে হবে। প্রফেসর তালুকাদার মনিরুজ্জামান সাহেব সেই কথাটি আমাদেরকে শিখিয়েছেন, পড়িয়েছেন যে, কখনো দ্বিমত না করা, লড়াই করে যাওয়া, সংগ্রাম করে যাওয়া। অবশ্যই আমরা জয়ী হব। এদেশের মানুষ সংগ্রাম করেই জয়ী হয়েছে।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খান বলেন, বাংলাদেশে আদর্শ শিক্ষক বলতে যা বোঝায় তালুকদার মনিরুজ্জামান ছিলেন তা। গবেষণা কর্মে তিনি সবসময় সম্পৃক্ত ছিলেন কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদের পেছনে দৌড়াননি, তিনি প্রক্টর হতে চাননি। তিনি হয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক, এই অধ্যাপনাই ছিল তার নেশা, তার পেশা এবং আমি মনে করি যে, বাংলাদেশের শিক্ষকরা যদি তালুকদার মনিরুজ্জামানকে অনুসরণ করে তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো অনেক উন্নতি হওয়ার সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভা সঞ্চালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম।
আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন হ এহছানুল হক মিলন প্রমুখ তালুকদার মনিরুজ্জামানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবনের স্মৃতিচারণ করেন।
মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেনসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও আলোচনা সভায় অংশ নেন।