সাকিবদের অপেক্ষা বাড়িয়ে শীর্ষে কুমিল্লা
ক্রীড়া ডেস্ক
ম্যাচটা যদিও ঢাকা-কুমিল্লার, তবু এই ম্যাচের ফলাফল নিয়ে অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছিল রাজশাহীও। কারণ শেষ চারে যেতে হলে যে সাকিবদের হার কামনা করা ছাড়া কোনো গতি নেই মিরাজদের। তাদের চাওয়া পূরণ হয়েছে। তুমুল উত্তেজনার ম্যাচে কুমিল্লার কাছে ১ রানে হেরে শেষ চারের অপেক্ষা বাড়লো সাকিবদের। পরের ম্যাচে জয় ভিন্ন অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই তাদের সামনে। আর এই জয়ে রংপুরকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এলো কুমিল্লা।
ম্যাচের আগে সহজ এক সমীকরণে দাঁড়িয়ে ছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। কুমিল্লাকে হারাতে পারলেই শেষ চারে জায়গা হবে তাদের। কারণ নেট রান রেটে রাজশাহীর চেয়ে অনেকটা এগিয়ে ঢাকা। তাছাড়া হাতে আছে আরও এক ম্যাচ। অন্যদিকে কুমিল্লার হার-জিত নিয়ে তেমন মাথা না ঘামালেও চলতো। ম্যাচটা যে তাদের জন্য নিছক আনুষ্ঠানিকতার।
১৪ পয়েন্ট করে নিয়ে তালিকার ওপরের তিন দল রংপুর রাইডার্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও চিটাগং ভাইকিংস আগেই প্লে অফ নিশ্চিত করেছে। ১২ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ৪ নম্বরে মেহেদী হাসান মিরাজের রাজশাহী। ১০ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে ৫ নম্বরে ছিল ঢাকা।
ম্যাচটা জিতলেই কেল্লা ফতে, অথচ এই মাচেই কীনা শেষ বলে ম্যাচ হেরে গেলেন সাকিবরা। শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থেকেও দলকে জেতাতে পারলেন না ক্যারিবীয় তারকা আন্দ্রে রাসেল। এজন্য অবশ্য তিনি নিজেও কিছুটা দায়ী। ৩০ রানের ইনিংস খেলতে যে ২৩ বল খেলতে হয়েছে এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানকে। তার মতো মারকুটে ব্যাটসম্যানের জন্য এটা অনেকটা বেমানান। তবে তাকে একা দোষী করার সুযোগ নেই, ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন ঢাকার প্রায় সব ব্যাটসম্যানই।
সবাইকে ছাপিয়ে ম্যাচের নায়ক সাইফউদ্দিন। ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান খরচে ৪ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। এর মধ্যে শেষ ওভারে রাসলকে সামলানোর কৃতিত্ব তাকে দিতেই হবে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো সমান ওভারে সমান রান খরচ করেছেন কুমিলার আরও দুই বোলার। ওই রান খরচ করেই ২ উইকেট নিয়েছেন মেহেদি হাসান। আর ১ উইকেট নিয়েছেন ওয়াহাব রিয়াজ। ১টি করে উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন মোশাররফ হোসেন ও শহীদ আফ্রিদি।
চট্টগ্রাম পর্বে রান বন্যা দেখেছিল বিপিএলের ষষ্ঠ আসর। চার জন ব্যাটসম্যান পেয়েছিলেন সেঞ্চুরির দেখা। তবে ঢাকায় এসেই এর উল্টো চিত্র। ১২৮ রানের সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি ঢাকা ডায়নামাইটসের। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার উপুল থারাঙ্গার উইকেট তুলে নেন মেহেদী হাসান। আরেক ওপেনার মিজানুর রহমানের উইকেট তুলে নেন মোশাররফ হোসান। এরপর রনি তালুকদার ১ রান করে বিদায় নিলে ১৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিক দল।
ঢাকার বিপদ আরও বাড়ে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের বিদায়ের পর। দলীয় ২৯ রানে সাকিবকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিনত করেন মেহেদী হাসান। পঞ্চম উইকেট জুটিতে সেই ধাক্কা সামাল দেন দুই ক্যারিবিয়ান কাইরন পোলার্ড ও সুনিল নারাইন। ৪২ রান আসে এ দুজনের ব্যাট থেকে।
দলীয় ৭১ রানে ব্যক্তিগত ২২ রান করে আফ্রিদির বলে আউট হন নারাইন। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন ক্যারিবীয় জুটি। রাসেল-পোলার্ড জুটিও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ইনিংসের ১৭ নম্বর ওভারে পরপর দুই বলে পোলার্ড ও নুরুল হাসানকে ফিরিয়ে কুমিলাকে ম্যাচে ফেরান সাইফউদ্দিন। ৯০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফের পথ হারায় ঢাকা।
ওয়াহাব রিয়াজের ১৯ তম ওভারে দ্বিতীয় বলে আউট হয়েও নো বলের কল্যাণে রক্ষা পেয়ে যান রাসেল। তবে ওই ওভারেই শুভাগত হোমের উইকেট তুলে নেন ওয়াহাব। জয়ের জন্য শেষ ওভারে ঢাকার প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। প্রথম বলে রুবেলকে ফিরিয়ে ঢাকার নবম উইকেট তুলে নেন সাইফউদ্দিন। জয়ের জন্য শেষ দুই বলে দরকার ছিল ১২ রান। পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন আন্দ্রে রাসেল। সাইফউদ্দিনের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত ১ রানের দারুণ এক জয় তুলে নেয় কুমিলা ভিক্টোরিয়ান্স।
এর আগে শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে কুমিলাকে দারুণ সূচনা এনে দেন এভিন লুইস ও তামিম ইকবাল। দ্রুত গতিতে ৩৮ রান যোগ করেন তারা। সুনিল নারাইনের বলে ব্যক্তিগত ৮ রান করে আউট হন লুইস। এরপর এনামুল হক বিজয়ও ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারে নি। রুবেলের বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান তিনি।
কুমিলার বড় ভরসার নাম ছিলেন তামিম। দলীয় ৫২ রানে ব্যক্তিগত ৩৮ রান করে শুভাগত হোমের বলে রুবেল হোসেনের দূর্দান্ত এক ক্যাচে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। ব্যর্থতার পরিচয় দেন শামসুর রহমান ও অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। শামসুর ২ ও ইমরুল ৭ রান করে বিদায় নিলে ৬৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বড় স্কোর গড়ার পথে ধাক্কা খায় কুমিলা ভিক্টোরিয়ান্স।