November 25, 2024
জাতীয়

সাংবাদিক নির্যাতন: ডিসি সুলতানার বেতন বাড়বে না ২ বছর

কুড়িগ্রামে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাংবাদিককে সাজা দেওয়া ও ‘নির্যাতনের’ ঘটনায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী আনীত ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আলোচিত তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনসহ (ডিসি) চার সরকারি কর্মকর্তাকে শাস্তির সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এরইমধ্যে ডিসি সুলতানার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। সুপারিশ অনুযায়ী দুই বছরের জন্য তার বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে।

গত ১০ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বাকী তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) উপসচিব মোছা. সুলতানা পারভীন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক থাকার সময় অনলাইনভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে ধরে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর বিধি ৩ (খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’র অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত বছরের ১৮ মার্চ তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়।

অভিযুক্ত কর্মকর্তা সুলতানা পারভীন গত বছরের ২৫ জুন লিখিত জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানি চান। ওই বছরের ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত ব্যক্তিগত শুনানিতে তার দেওয়া মৌখিক বক্তব্য ও লিখিত জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিভাগীয় মামলাটি তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আলী কদরকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।

এতে আরও বলা হয়, তদন্ত কমিটির দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে মোছা. সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী আনীত ‘অসদাচরণ’র অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তদন্ত বোর্ডের প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনার পর সুলতানা পারভীনকে গুরুদণ্ড দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর তাকে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর বিধি ৭(৯) অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৮ জুন তাকে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। সুলতানা পারভীন ২২ জুন লিখিতভাবে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর জবাব দেন।

দাখিল করা জবাব ও তদন্ত প্রতিবেদনসহ অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক প্রশাসনিক বিষয় বিবেচনা করে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৪ (২)(খ) বিধি অনুসারে তাকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার ‘লঘুদণ্ড’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

এতে আরও বলা হয়, বিভাগীয় মামলায় অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী সুলতানা পারভীনকে ‘দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা’র শাস্তি দেওয়া হলো। তিনি ভবিষ্যতে এ মেয়াদের কোনো বকেয়া পাবেন না এবং এ মেয়াদ বেতন বৃদ্ধির জন্য গণনা করা যাবে।

জানা যায়, সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানি শেষ করে এ ঘটনায় জড়িত চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীনকে লঘুদণ্ড হিসেবে দুই বছর বেতন বাড়ানো স্থগিত রাখা, তৎকালীন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দিনের পদাবনতি, এনডিসি এসএম রাহাতুল ইসলামের তিন বছর বেতন বাড়ানো হবে না এবং রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করা সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমাকে চাকরিচ্যুত করার সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ডিসি সুলতানার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও বাকি তিন জনের বিরুদ্ধে এখনও শাস্তির সুপারিশ কার্যকর হয়নি।

মাদকবিরোধী অভিযানের নামে গত বছরের ১৩ মার্চ দিনগত রাতে স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন এবং দুই সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে তদন্ত কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানি শেষে ডিসি সুলতানাসহ চার সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে কমিটি।

এদিকে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার পরপরই ডিসি সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসনে তার চাকরি ন্যস্ত করা হলেও কোনো পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আরডিসি নাজিম উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রাহাতুল ইসলাম বর্তমানে বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনারের দায়িত্বে রয়েছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমাকে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *