November 27, 2024
জাতীয়

সাংবাদিক আরিফুলকে সাজার নথিপত্র হাই কোর্টে তলব

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

কুড়িগ্রামে গভীর রাতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জেল-জরিমানা দেওয়ার ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের সব নথিপত্র তলব করেছে হাই কোর্ট। আগামী ২৩ মার্চের মধ্যে ওই সব নথিপত্র দাখিল করার পাশাপাশি এ ঘটনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নেওয়া পদক্ষেপ জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এ বিষয়ে ওই দিন আদেশের জন্য ধার্য করেছে আদালত। একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন ও আইনজীবী ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশিস ভট্টাচার্য্য।

বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে শুক্রবার গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মাদক রাখার অভিযোগে এক বছরের কারাদÐ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে রোববার বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ জনস্বার্থে হাই কোর্টে এ বিষয়ে রিট আবেদন করেন।

আবেদনে টাস্কফোর্সের নামে আরিফুল ইসলামকে অবৈধ সাজা ও আটক করা কেন সংবিধান পরিপন্থি হবে না, আরিফুল ইসলামকে ৫০ লাখ টাকা কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, এ মর্মে রুল জারির আবেদন জানানো হয়।

অভিযোগ উঠেছে, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে আরিফুলকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩ মার্চ থেকে কুড়িগ্রাম জেলার ডিসির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সুলতানা পারভীন। কুড়িগ্রাম শহরের একটি সরকারি পুকুর সংস্কারের পর তিনি নিজের নামানুসারে ওই পুকুরের নাম ‘সুলতানা সরোবর’ রাখতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১০ মাস আগে। আরিফুলকে শাস্তি দেওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে সুলতানাকে কুড়িগ্রাম থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। রিট আবেদনের শুনানির এক পর্যায়ে বিচারপতি আশরাফুল কামাল জানান, এ বিষয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ আদালত ইতিবাচকভাবে দেখছে।

ডিসি সুলতানার বিষয়ে এ বিচারপতি বলেন, একজন ব্যক্তি রাষ্ট্রকে রিপ্রেজেন্ট করে না। সরকারকেও রিপ্রেজেন্ট করে না। ব্যক্তির তার ভুলের দায় তাকেই নিতে হবে। তাকে সমর্থন না দিলে তা হবে রুল অব ল, আর সমর্থন দিলে রুল অব ল এর ভায়োলেশন হবে।

এ ঘটনায় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ দেখছেন জানিয়ে বিচারপতি আশরাফুল কামাল বলেন, আমাদের সবার উদ্দেশ্যে হলো- সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম যেন যথাযথ বিচার পান। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী যে পদক্ষেপ নিলেন ইন্সটেন্ট এমন সিদ্ধান্ত আগে দেখিনি।

ভ্রাম্যমাণ আদালতে যদি দোষ স্বীকারের ভিত্তিতে সাজা দেওয়া হয় তাহলে সাংবাদিক আরিফুলের জামিন জামিন কিভাবে হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চায় আদালত। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দেবাশিস ভট্টাচার্য্য আদালতকে জানান, ওই সাজার বিরুদ্ধে আপিল করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন।

এ সময় আদালত বলে, পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছে, আরিফুলের পরিবার থেকে জামিন আবেদনের আগেই জামিন হয়েছে। আপনি হাকিম, আপনিই সাজা দিলেন, আবার আপনিই জামিন দিলেন। সব কিছু তো আইনের মধ্যে হতে হবে, বলেন বিচারপতি আশরাফুল কামাল।

এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ১৩ জনের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। দুইজন সাক্ষী এবং অন্যান্য মানুষের উপস্থিতি এই সাজা দেওয়া হয়েছে। সবকিছু প্রক্রিয়া আইন মোতাবেক করা হয়েছে।

পরে অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন বলেন, ওই সাংবাদিক যদি তার রিপোর্ট ভুল করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দেওয়া যেত, অথবা অন্যান্য আইনে মামলা করা যেত। কিন্তু সেখানে তা না করে বাড়ি থেকে গভীর রাতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্ষমতা আছে বলে কোনো নাগরিককে রাতের বেলা ধরে এনে এভাবে সাজা দেওয়া যায় না। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার।

ওই ভ্রাম্যমাণ আদালত উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত হয়ে এ ধরনের সাজা দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তারা বলেনি যে, এই অভিযান কোনো গোপন সংবাদের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এমনকি আশপাশের আর কোনো বাড়িতেও তল্লাশি করেনি। এর মানে প্রমাণ হয় এই অভিযান ও মোবাইল কোর্ট উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে।

শুনানির এক পর্যায়ে বিচারক বলেন, রাষ্ট্রের চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের মধ্যে সংবাদপত্র অন্যতম। সংবাদপত্র যদি ঠিকমত কাজ করে তাহলে বাকি তিনটি স্তম্ভও ঠিকভাবে কাজ করবে। সাংবাদিকরা জেগে থাকে বলে সমাজে অপরাধ কম হয়।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *