September 19, 2024
জাতীয়

সহকর্মীদের ফুলেল শ্রদ্ধায় চিরবিদায় নিলেন পুলিশ কর্মকর্তা রৌশন আরা

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

সহর্কমী আর বন্ধু-স্বজনদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শেষ বিদায় নিলেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি রৌশন আরা বেগম। গতকাল বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজের পর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে এই পুলিশ কর্মকর্তার জানাজা হয়।

পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, চাঁদপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রৌশনের কফিনে।

আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ছাড়াও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার ফুলেল শ্রদ্ধায় বিদায় জানান তাদের দীর্ঘদিনের সহকর্মীকে।

রৌশন আরার স্বামী শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, তিনি ছিলেন আপনারাদের সহকর্মী। জীবনে তিনি অন্যায়ের সাথে আপস করেননি। তার ভেতরে ছিল বিশাল দেশপ্রেম। কোন সমস্যা কীভাবে সহজে সমাধান করা যায় সেটাই ছিল তার সাধনা। দীর্ঘদিন তিনি আপনাদের সাথে কাজ করেছেন। যদি তার কোনো কর্মকাণ্ডে আপনারা কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে তাকে মাফ করে দেবেন।

রৌশনই দেশের পুলিশ বিভাগের প্রথম নারী অফিসার, যিনি পুলিশ সুপারের দায়িত্বে জেলা পুলিশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অতিরিক্ত আইজিপির পদে বাংলাদেশের দ্বিতীয় নারী অফিসার তিনি।

পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টরের দায়িত্বে থাকা রৌশন জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ ফ্রন্ট পুলিশ ইউনিটের মেডাল প্যারেডে যোগ দিতে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে গিয়েছিলেন। সেখানেই রোববার সন্ধ্যায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স করে ১৯৮৮ সালে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন রৌশন আরা বেগম। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি পুলিশের হিসাবরক্ষণ বিভাগের সহকারী কমিশনার, রিজার্ভ অফিস, ট্রাফিক বিভাগ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রশিক্ষণ ইউনিটে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

কসোভোয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ক্রাইম অ্যানালাইসিস অফিসার, সুদানে আনমিস-আনপোল শান্তিরক্ষা মিশনের চিফ অব স্টাফের দায়িত্বেও তিনি ছিলেন। দায়িত্ব পালনে কৃতিত্বের জন্য রৌশন আরা দুইবার আইজিপি ব্যাজ পান এবং বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুলিশ পদক ‘পিপিএম’ অর্জন করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, আমি যতটুকু দেখেছি, তিনি (রৌশন আরা) একজন দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি যে কোনো কাজ সিরিয়াসলি দেখতেন এবং দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতেন। আমরা তাকে আরও বড় কোনো দায়িত্বে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছিলাম, এর মধ্যে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।

রৌশন আরার সঙ্গে একই ব্যাচে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়া বেনজীর আহমেদ এখন আছেন র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে। দীর্ঘ দিনের সহকর্মীর কথা স্মরণ করতে গিয়ে বেনজীর বলেন, তিনি ছিলেন বন্ধু বৎসল, সদা হাস্যোজ্জ্বল। নারীর ক্ষমতায়নে তিনি কাজ করেছেন, খুবই কর্মঠ ছিলেন তিনি।

টার্কিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার ভোরে রৌশন আরার কফিন দেশে আসার পর প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় তার মহানগর প্রজেক্ট আবাসিক এলাকার বাসায়। পরিবারের সদস্য আর আত্মীয়-স্বজনদের কান্নায় সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সকাল ১০টায় মগবাজারের নয়াটোলা জামে মসজিদ ও দুপুর ১২টায় মগবাজার ওয়্যারলেস জামে মসজিদে দুই দফা জানাজার পর রৌশন আরার কফিন নেওয়া হয় পুলিশ লাইনসে। সেখানে আরেক দফা জানাজা আর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এই পুলিশ কর্মকর্তাকে বিকালে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। রৌশন আরার স্বামী মো. শফিকুল আলম চৌধুরী একজন ব্যবসায়ী। তাদের একমাত্র মেয়ে আর মুনাহা চৌধুরী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ছেন।

 

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *