সর্ষের ভেতর ভূত থাকলে দুদক জনগণের আস্থা হারাবে : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দুর্নীতি দমনে দুদকের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা অবলম্বন করতে হবে। সর্ষের ভেতর ভূত যেন না থাকে, তাহলে দুদক জনগণের কাছে আস্থা হারাবে।
আজ (শুক্রবার) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটোরিয়ামে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের রেকর্ড করা বক্তব্য প্রচার করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন দুদক চেয়ারমান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, দুর্নীতি বাংলাদেশের নয়, এটা বৈশ্বিক সমস্যা। দুর্নীতি সমাজে বৈষম্য তৈরি করে। বিকাশ ও উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। আমি মনে করি মানুষের মধ্যে দুর্নীতি বিষয়ক সচেতনতা তৈরি ও দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে দুর্নীতি কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, একটা সময় ছিল ঘুষখোর, সুদখোর ও দুর্নীতিবাজদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই মূল্যবোধ হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন শহর, নগর ও গ্রামসহ সবখানেই যেন টাকাওয়ালাদের জয় জয়কার। টাকা কিভাবে এলো, সৎ পথে নাকি অসৎপথে এসব নিয়ে কারও মাথাব্যাথা নেই। সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠি হয়েছে যেন টাকা। তাই রাজনীতিবিদ চাকরিজীবী, পেশাজীবী, কৃষক ও শ্রমিকরা সবাই যেন টাকার পেছনে দৌড়াচ্ছে। টাকা কিভাবে এলো, সৎ পথে নাকি অসৎ পথে এসব নিয়ে ভাবনার ফুরসত নেই।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের রেকর্ড করা বক্তব্য প্রচার করা হয়
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বাংলাদেশ সব সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতা বাস্তবায়ন দেশের সমৃদ্ধি এনে দেবে। দুর্নীতিবাজকে সহায়তা করাও দুর্নীতি। দুর্নীতি দূর করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ছোট ও বড় সকল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হয়, সমাজে এটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্নীতি দমনে দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা অবলম্বন করতে হবে।
এর আগে সকালে বেলুন উড়িয়ে ২০তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদ্বোধন করা হয়। এরপর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক, দুদক সচিব মো মাহবুব হোসেন এবং কমিশনের মহাপরিচালক ও আইনজীবীসহ সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব’। দিবসটি উপলক্ষে নতুন সাজে সেজেছে দুদক। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে অফিস ভবন, দুদকের মিডিয়া সেন্টার ও অফিসের পেছনের গেট জুড়ে দুর্নীতিবিরোধী ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং ৪৯৫টি উপজেলায় বড় পরিসরে উদযাপন হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। দেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ, সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং পিকেএসএফসহ অন্যান্য এনজিওতে দুর্নীতি বিরোধী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
জাতিসংঘ ২০০৩ সালে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সে হিসেবে এবার হচ্ছে ২০তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। সারা বিশ্বকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন এগেইনেস্ট করাপশনের (আনকাক) মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশ আনকাকের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০০৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন শুরু করে। যদিও সরকারিভাবে ২০১৭ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়।