November 28, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে: তথ্যমন্ত্রী

বিশ্ব সংকটময় পরিস্থিতির জন্যই বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমাদের অর্থনীতিতে এত ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব না। প্রতিদিন ১০০ ডলার করে গত তিন মাসে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।

সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমে এলে তার প্রভাব আমাদের দেশে পড়তে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। তখন আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।

সোমবার (০৮ আগস্ট) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শহীদ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এবং সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হচ্ছে জার্মানিও জ্বালানি সংকটের জন্য সাশ্রয়ী উদ্যোগ নিয়েছে। বিদ্যুতে রেশনিং করা হচ্ছে। ফ্রান্সেও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য নানা বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। বিধিনিষেধের ব্যত্যয় ঘটলে ৭৫০ ইউরো জরিমানা ঘোষণা করেছে। গ্রিস ও ইতালিও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ঘোষণা দিয়েছে। হাঙ্গেরিতে এনার্জি ইমারজেন্সি ঘোষণা করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিককে মেসেস দিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে এই সংকটের প্রেক্ষাপটে আমাদের সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে। আমি জনগণের কাছে অনুরোধ জানাবো, বিশ্ববাজারে যখন তেলের মূল্য কমে আসবে, যখন বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করবে তখন জ্বালানি তেলের মূল্য আবার সমন্বয় করা হবে।

তিনি বলেন, আমি জানি বিষয়টি নিয়ে অনেক রাজনৈতিক দল মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে। তাদের আমি অনুরোধ জানাবো, বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে তাকাতে। সরকার যে গত বছর ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। এ বছরও কি ৫৩ হাজার কোটি টাকা বা বিপিসির পক্ষে প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব? সেটি কোনো দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। সেটি সম্ভব নয় বিধায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের অনেক শক্তিশালী দেশ এবং জাপানও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী নীতি নিয়ে চলছে। সংকটময় পরিস্থিতির জন্যই বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে দাম কমে এলে তার প্রভাব আমাদের দেশে পড়তে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। তখন আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।

এক লাফে একদিন এত টাকা বাড়ানো হলো, এটা মানুষের জন্য বোঝা কিনা এবং ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশের সাথে তুলনা করা কতটা যৌক্তিক— এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য আপনাদের সামনে ডাটা তুলে ধরেছি। আর আমাদের পরিস্থিতি আশেপাশের দেশগুলোর সাথে তুলনীয়। ভারতের অর্থনীতি আমাদের থেকে অনেক বেশি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। যদিও মাথাপিছু আয়ে তাদের আমরা ছাড়িয়ে গেছি। ভারতে জ্বালানি তেলের যে মূল্য আমাদের দেশেও একই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নেপালসহ অন্যান্য দেশে মূল্য কিন্তু আরও অনেক বেশি।

তিনি বলেন, তেলের দাম আরও আগেই বাড়ানো উচিৎ ছিল। তাহলে আমাদের এত ভর্তুকি দিতে হতো না। হঠাৎ করে বাড়ানোর প্রেক্ষিতে মানুষ একটু হতচকিত হয়ে গেছে। এটা আমি জানি বা বুঝি। তবে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে মূল্য সমন্বয় না করে উপায় ছিল না।

বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার সাথে সাথে দেশের বাজারে দাম বেড়ে যায়, আর দাম কমলে সেটা দুই মাস পরে প্রভাব পড়ে, এতে কি ব্যালান্সে বৈষম্য হচ্ছে না— এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, এটা একটা বাস্তবসম্মত পদ্ধতি।  যখন বিশ্ববাজারে দাম কমে তখন এর প্রভাব পড়তে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। এজন্য যে দাম কমলে আজকেই বাংলাদেশে চলে আসে না। আসতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই মাস। আর বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দেশে দাম বাড়ে, এটা ঠিক নয়। যখন ১৭০ ডলারে উঠেছে তখন আমরা দাম বাড়াইনি। যখন দেখতে পারছি যে, কোনোভাবে আমাদের অর্থনীতি এত ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব না, প্রতিদিন ১০০ ডলার করে গত তিন মাসে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। তখন সরকার দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।

দেড় দুই মাস পরে কি দাম কমবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে কখন বাড়ে, গত এক বছরের চিত্র যদি দেখেন এক বার কমে আবার বাড়ে। এরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছে। কোভিডের পর ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের জন্য দাম ওঠানামা করছে। বিশ্ববাজার যখন স্থিতিশীল হবে এবং দাম কমবে তখন নিশ্চয় সরকার মূল্য সমন্বয় করবে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সাথে সরকার পরিবহন ভাড়াও নির্ধারণ করে দিয়েছে, তারপরও বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে সকল পণ্যের দাম বেড়েছে, যা ঠিক মতো মনিটরিং হচ্ছে না। এটার দায়িত্ব কে নেবে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তার থেকে যদি কেউ ভাড়া বেশি নেয়, সেটা অন্যায়। সরকার নিশ্চয়ই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এটির প্রভাব অন্যান্য পণ্যের ওপর এখনই পড়ার কোনো কারণ নেই।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *