November 30, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

সরকারের সাহসী চিন্তার ফসল এবারের বাজেট

করোনা মহামারি থেকে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার গতিপথ নির্ণয়ে প্রণীত এবারের বাজেট। জীবন-জীবিকার ভারসাম্য বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সাহসী চিন্তার ফসল এ বাজেট। বিএনপির পক্ষে এই বাজেটের ব্যাপকতা ও সম্ভাবনা অনুধাবন করা সম্ভব নয়।

শুক্রবার (১২ জুন) নিজ বাসভবন থেকে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের উপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেওয়া আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একথা জানান।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে কয়েক মাস ধরে বিপর্যয়ের পরও আমাদের বাজেটের আকার কমেনি, বরং বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১১ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারাবাহিক অগ্রগতির সুফল এই বাজেট।

‘করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা, মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সব প্রতিকূলতা জয় করে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের এ বাজেট উত্থাপন করা হয়। এ বাজেট করোনায় বিদ্যমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেওয়ার বাস্তবসম্মত প্রত্যাশার দলিল।’

বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, সব দিক বিবেচনায় নিয়ে করোনার কবল থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের এক ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট হচ্ছে এবারের বাজেট। এটি একটি জনবান্ধব ও জনঘনিষ্ট অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কোনো ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ না করেই বিএনপি আগেভাগে প্রস্তুত করা ও মন গড়া, পুরনো ও গতানুগতিক গল্পের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বিএনপির নেতারা গত ১১টি বাজেট ঘোষণার পর বাজেট নিয়ে নানা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন এবং বরাবরই বলেছেন বাজেট বাস্তবায়ন হবে না, অর্থনীতি মুথড়ে পড়বে। এ ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করতে দেখা গেছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকায় অবস্থা মাত্র ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছিল। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকের বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় শুধু স্বস্থ্যখাতেই ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।

তিনি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গতানুগতিক ধারার সঙ্গে ‘আউট অব বক্স’ চিন্তার সমন্বয় করে সংকট জয়ের নবউদ্যোম সৃষ্টিতে এই বাজেট পেশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শীর্ষক যুগোপযোগী ও জনকল্যাণমুখী বাজেট প্রণয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের পর ইতোমধ্যে যে অর্থনৈতিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তাকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট বলা যেতে পারে। ১৯টি প্যাকেজে শেখ হাসিনা ঘোষিত ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্রণোদনাটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।’

করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা ও কর্মোদ্যোগ বিশ্বখ্যাত দ্যা ইকোনমিস্ট, ফোর্বস, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামসহ অন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাজেট প্রণয়নের দু’টি অনিশ্চয়তার দিক তুলে ধরে কাদের বলেন, এই বাজেট প্রণয়নে দু’টি অনিশ্চয়তা ছিল, যা জয় করা ছিল দুরূহ। অনিশ্চয়তা দু’টি হচ্ছে- বাংলাদেশে করোনা মহামারি চূড়ান্ত পর্যায়ে কী হবে, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো স্বচ্ছ ধারণা না থাকা এবং করোনা-উত্তর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি কী হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে এখনই বলতে না পারা। এই অনিশ্চয়তা জয় করে দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবিলার একমাত্র ত্রাণকর্তা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অত্যন্ত সফলভাবে বাজেট প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছেন।

করোনা মোকাবিলা মোকাবিলায় বাজেটে অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয় হ্রাস পেয়েছে। ফলে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গত অর্থবছরে ধার্য করা লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা থেকে ২৯ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা কমিয়ে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

‘পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়, আমাদের জাতীয় আয়-ব্যয় নির্দিষ্ট থাকবে কিনা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটা পরিবর্তন হতে পারে। সে কারণে এটিকে একটি ফ্লেক্সিবল ডকুমেন্ট হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছর অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রথম বছর। সুতরাং, এই বাজেটে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অধিকতর গুরুত্ব পাবে।’

কাদের বলেন, বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যে কোনো জরুরি চাহিদা মেটাতে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। করোনার প্রভাব বেড়ে গেলে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতাল নির্মাণসহ আইসিইউ, ভেন্টিলেশন সাপোর্ট, কেয়ার সরঞ্জাম, করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কিটসহ নানা যন্ত্রপাতি আমদানি এবং উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রস্তাব রাখা হয়েছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের গবেষণা চলছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে আনার পরিকল্পনাও বাজেট প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *