সরকারি চাকরির জন্য আবার অনশনে প্রতিবন্ধী চাঁদের কণা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
সরকারের আশ্বাসের পরও মনমত চাকরি না পেয়ে দ্বিতীয়বারের মত অনশনে বসেছেন সিরাজগঞ্জের প্রতিবন্ধী তরুণী মাহবুবা হক চাঁদের কণা।
গত ১৬ অক্টোবর থেকে তিনি ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন করছেন জানিয়ে তার ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান রিপন শুক্রবার বলেন, গত চার দিন ধরে আপু কিছু খাচ্ছে না, খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন স্যালাইন দিতে হচ্ছে।
স্নাতকোত্তর পাসের পর অনেক চেষ্টা করেও চাকরি না পাওয়ায় গত জুনের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশন শুরু করেছিলেন এই তরুণী। তিন দিন পর চাকরির আশ্বাস পেয়ে অনশন ভেঙে তিনি বাড়ি ফিরে যান।
ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া তাকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি সে সময় বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবন্ধীদের ভাতা দিচ্ছে। সরকার প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আইন প্রণয়ন করেছে।
রিপন বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচালিত শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট মৈত্রী শিল্পের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে অস্থায়ী নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল চাঁদের কতাকে। হাজিরার ভিত্তিতে দৈনিক মজুরি ধরা হয়েছিল ৫৬০ টাকা। কিন্তু আপু চাইছিলেন তার যোগ্যতা অনুযায়ী একটা চাকরি। এ কারণে ওই চাকরি না নিয়ে নতুন করে অনশন শুরু করেছেন।
সরকারের তরফ থেকে এখন নতুন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে বিপ্লব বড়ুয়া শুক্রবার বলেন, মেয়েটির অবস্থা বিবেচনা করে তাকে একটি চাকরি দিয়েছিলাম। কিন্তু সে ওই চাকরিতে যোগ দেয়নি। সে বলছে যোগ্যতা অনুসারে তাকে দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি দিতে হবে।
দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি দিতে পারে পিএসসি, সেটা একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। পিএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়া একটা নিয়মের মাধ্যমে হয়। প্রিলি, রিটেন, ভাইভা পাস করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ পেতে হয়। পিএসসির চাকরি সরাসরি দেওয়ার কোনো বিধান নেই। অনশন না করে চাঁদের কণা আগের প্রস্তাবিত ওই চাকরিতে যোগ দিলেই ভালো করবেন বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী।
নয় মাস বয়সে পোলিও আক্রান্ত হওয়ায় তার দুটি পা অচল হয়ে যায় সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার বিয়াড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের মেয়ে মাহবুবা হক চাঁদের কণার। তবে বাবা-মায়ের চেষ্টায় দুই হাতে ভর করেই তিনি প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে নিতে শেখেন।
রাজশাহীর মাদারবক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাস করে ২০১৩ সালে ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন এই তরুণী।
তিনি যখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী, তখন তার মা মারা যান। কয়েক বছর পর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। ছোট দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন, আরেকজন এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
চরম দারিদ্র্যের মধ্যেও চাঁদের কতা থেমে থাকেননি। টেলিভিশনের জন্য অনুষ্ঠান গ্রন্থনা এবং কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে জীবিকা চালিয়ে গেছেন।
শিক্ষা জীবনের কঠিন দিনগুলোর কথা স্মরণ করে গত জুনে তিনি বলেছিলেন, আমি যখন মাদারবক্স কলেজে পড়তাম, পঞ্চম তলায় আমার ক্লাস হত। ৯টার ক্লাসের জন্য আমি কলেজে যেতাম সকাল ৭টার দিকে। কারণ হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে দেড় ঘণ্টার মত সময় লাগত। স্কুলজীবন থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত এমন লক্ষ্য-কোটি বাধা পেরিয়ে প্রতিবন্ধিতা জয় করেছি। আমার স্বপ্ন ছিল একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়া।