সমাবেশের আগে বিএনপির অবস্থানের আশায় গুড়েবালি!
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ ও দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করেছে বিএনপি। এসব কর্মসূচি অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করলেও ঢাকার মহাসমাবেশ ঘিরে বিপাকে পড়েছে দলটি।
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করা হচ্ছে দলটির পক্ষ থেকে। তারপরেও সমাবেশের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও জটিলতা দেখা দিয়েছে সমাবেশের স্থান নিয়ে।
কর্মসূচির মাত্র তিন দিন বাকি থাকলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি সমাবেশস্থল। এমন অবস্থায় প্রস্তুতি থাকলেও অন্য বিভাগীয় সমাবেশের মতো ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের আগে থেকে নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে অবস্থানের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকেই ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করার চিন্তা ছিল। তখন তাদের ধারণা ছিল ঢাকায় সমাবেশ করা নিয়ে খুব বেশি বাধার মুখে পড়তে হবে না। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি ভিন্নদিকে যাওয়ায় সেই চিন্তা থেকে কিছুটা সরে এসেছেন দলটি।
শেষ পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়া নয়াপল্টন বা আরামবাগ যেখানেই সমাবেশের অনুমতি পাবে সেখানে ৯ ডিসেম্বর নেতাকর্মীরা অবস্থান করতে পারেন বলে জানা গেছে।
১০ ডিসেম্বর ঘিরে রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের নিয়ে আগে থেকে দলটির অবস্থানের চিন্তা থাকলেও সরকারের হার্ডালাইনের কারণে তাদের সে আশা গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে। তারপরও ঢাকা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল আগেভাগে আসা নেতাকর্মীদের জন্য কিছু করার। কিন্তু এখনো তো অনুমতির ঝামেলাই কাটেনি। গ্রেফতারের ভয়ও আছে। এখন কী হবে কালকের (বুধবার) পর বোঝা যাবে।’
মহানগর দক্ষিণের দফতরের সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, ‘বুধবার থেকে কম্বল, পাটি দেওয়ার প্রস্তুতি আছে। যাতে করে লোকজন যারা আসবে তাদের কষ্ট না হয়। কিন্তু সব নির্ভর করবে সরকার কেমন আচরণ শেষ পর্যন্ত করে তার ওপর।’
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে গত ২০ নভেম্বর নয়াপল্টনে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে জনভোগান্তির কথা বিবেচনা করে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে আপত্তি জানায় বিএনপি। দলটির নেতাদের ভাষ্য, সোহরাওয়ার্দীতে তারা অনুমতি চায়নি। সেখানে তারা যাবেও না।
সোহরাওয়ার্দীতে না যাওয়ার পেছনে চারিদিকে রেলিং ঘেরা, পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়া, উদ্যানে প্রবেশ ও বের হওয়ার সরু জায়গাসহ নানা অভিযোগ তোলেন বিএনপি নেতারা। বিশেষ করে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির তৈরি হলে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতিরও আশঙ্কা করছে দলটি।
যে কারণে শুরুতে নয়াপল্টনের ব্যাপারে অনড় থাকলেও পরে তারা বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে আরামবাগ এলাকার রাস্তায় সমাবেশ করার কথা পুলিশকে জানানো হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাস্তায় কোনো সমাবেশের অনুমতি বিএনপিকে দেওয়া হবে না।
এমন অবস্থায় জায়গায় নিয়ে এখনো দোটানার মধ্যে আছে বিএনপি। আর নেতাকর্মীরাও আছেন ধোঁয়াশার মধ্যে। তবে নিয়মিত তারা নয়াপল্টনে জড়ো হচ্ছেন। মিছিল করে পুরো এলাকা সরগরম রাখছেন।
মঙ্গলবার থেকে মহানগর ও যুবদলের পক্ষ থেকে নয়াপল্টনে আসা নেতাকর্মীদের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার উদ্বোধন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
যুবদলের ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমাদের আগেভাগে বসার চিন্তা নেই। কারণ পরিস্থিতি তো অনেকটা অন্য দিকে চলে গেছে।’
আগে থেকে অবস্থানের শুরু যেখানে
গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সব বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘোষণা অনুযায়ী গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে করেছে বিএনপি। সবশেষ ১০ ডিসেম্বর হবে ঢাকায় মহাসমাবেশ।
গত ১২ অক্টোবর বিএনপির প্রথম বিভাগীয় সমাবেশ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ময়মনসিংহ থেকে প্রতিটি সমাবেশের আগের দিনই বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়ে নেন। দূরদূরান্ত থেকে কেউ কেউ চিড়া-মুড়ি নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন।
অনেকে এলাকা থেকে বাজার করেও নিয়ে এসে সমাবেশস্থলে রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করেছেন। যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনাও হয়েছে বেশ।
সরকারি দলের আশঙ্কা, ঢাকায়ও বিএনপি এমনটা করতে পারে। যে কারণে বিএনপির সমাবেশ যেখানেই হোক না কেন, আগের দিন থেকে অবস্থান নেওয়ার সুযোগ দেবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এরইমধ্যে ঢাকার মেস, হোটেল ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি ও গ্রেফতার অভিযান চালানো শুরু হয়েছে। এ ছাড়া নয়াপল্টনসহ সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি রাখা হবে। ইতিমধ্যে সড়কে তল্লাশিও করা হচ্ছে।
সরকারি নানা সূত্র বলছে, পুলিশের পক্ষ থেকে আগেভাবে নেতাকর্মীরা যাতে ঢাকায় ঢুকতে না পারে সেজন্য প্রবেশ পথগুলোতে আগে থেকেই কয়েক স্তরের নিরাপত্তা চৌকি বসানো হবে।
এছাড়া ঢাকা মহানগর, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ আশপাশের জেলাগুলোর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকতে বলা হয়েছে।
ছাত্রলীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কাল থেকে সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
যদিও ঢাকায় নেতাকর্মীদের অবস্থানের বিষয়টিকে আমলে নিতে রাজি নন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।
এ্যানী বলেন, ‘অন্য জায়গায় ধর্মঘটসহ নানা কারণে আগে থেকে লোকজন এসেছে। ঢাকায় তেমন হওয়ার দরকার কী? নেতাকর্মীর তো অভাব নেই। আর এখানে বসে থাকার যে কথা বলা হচ্ছে এটা বানোয়াট। আমরা সমাবেশ করব। চলে যাব। এটা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ নেই।