November 26, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

সব বয়সীদের জন্য ব্রয়লার মুরগির মাংস নিরাপদ: গবেষণা

ব্রয়লার মুরগির মাংস সব বয়সী মানুষের জন্য নিরাপদ। এতে মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি। যা পাওয়া গেছে তা ক্ষতিকর মাত্রার চেয়ে কম। যা ঝুঁকিমুক্ত। এমনই তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) গবেষণায়।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরে কৃষি ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও উদ্যোগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অধীনে ব্রয়লার মুরগির মাংস নিরাপদ কিনা, তা জানতে একটি গবেষণা গত জানুয়ারি-জুন ২০২২ সময়ে পরিচালিত হয়েছে। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিলো ব্রয়লার মুরগির মাংসে, হাড়ে, কম্পোজিটে (কলিজা, কিডনি এবং গিজার্ডের সমন্বয়) এবং মুরগির খাদ্যে কি পরিমাণ এন্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতু আছে তা নির্ণয় করা।

গবেষণায় বাংলাদেশের পাঁচটি জেলা শহরের (ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং বরিশাল) ব্রয়লার খামার (ছোট, মাঝারি এবং বড়) এবং বাজার হতে ব্রয়লারের মাংস, হাড় ও কম্পোজিট এবং ব্রয়লার খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি ঢাকা জেলার তিনটি সুপার শপ হতে ব্রয়লার মুরগির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত প্রায় ১২০০টি ব্রয়লার মুরগি এবং ৩০টি ব্রয়লার মুরগির খাদ্য হতে ৩১৫টি নমুনা প্রস্তুত করে বহুল ব্যবহৃত ১০টি এন্টিবায়োটিক এবং ৩টি ভারী ধাতুর অবশিষ্টাংশের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়।

দশটি এন্টিবায়োটিকের মধ্যে ৭টি এন্টিবায়োটিক (এনরোফ্লক্সাসিন, সিপরোফ্লক্সাসিন, নিওমাইসিন, টাইলোসিন, কলিস্টিন, এমোক্সাসিলিন এবং সালফাডায়াজিন) পরীক্ষণের জন্য নমুনাসমূহ SGS Bangladesh Ltd. এর মাধ্যমে SGS Laboratory, Chennai, India-তে প্রেরণ করা হয়। বাকি ৩টি এন্টিবায়োটিক (ক্লোরামফেনিকল, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন এবং ডক্সিসাইক্লিন) এবং ৩টি ভারী ধাতু (আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম ও লেড) পরীক্ষণের জন্য নমুনাসমূহ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীন আধুনিক উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ISO certified and accredited কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি, সাভারে পরীক্ষা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তার গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বলেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, ব্রয়লার মুরগির মাংসে, হাড়ে এবং কম্পোজিটে মূলতদুইটি এন্টিবায়োটিক (অক্সিটেট্রাসিাইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন) এবং ৩টি হেভি মেটালের (আর্সেনিক, ক্রোমিয়ামও লেড) সামান্য উপস্থিতি রয়েছে, যা অস্বাভাবিক নয় এবং তা সর্বোচ্চ সীমার অনেক নিচে খামার এবং বাজারে প্রাপ্ত ব্রয়লার মাংসের চেয়ে পারশপের ব্রয়লার মাংসে এন্টিবায়োটিক এবং হেভি মেটাল এর পরিমাণ কম রয়েছে।

ব্রয়লার মুরগির মাংসে গড়ে ৮.০ পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ৯.১ পিপিবি ডক্সিসাইক্লিন, ৬.২ পিপিবি আর্সেনিক, ১৯০.৭ পিপিবি ক্রোমিয়াম এবং ২৫৯.১ পিপিবি লেড রয়েছে, যা সর্বোচ্চ সহনশীলের চেয়ে যথাক্রমে ১২.৫ গুণ, ১০. ৯ গুণ, ৫.২ গুণ এবং ২৩.১ গুণ নীচে রয়েছে।

ব্রয়লার মুরগির হাড়ের নমুনা পরীক্ষণের ফলাফলে দেখা যায়-গড়ে ৫৩.৭ পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ২৭.০ পিপিবি ডক্সিসাইক্লিন, ৭.২ পিপিবি আর্সেনিক, ৪৩৯.৯ পিপিবি ক্রোমিয়াম এবং ৪৬৪.৬ পিপিবি লেড রয়েছে, যা সর্বোচ্চ অবশিষ্ট সীমার (MRL) চেয়ে যথাক্রমে ১.৮ গুণ, ৩.৭ গুণ, ৫.৫ গুণ, ২.২৭ গুণ এবং ১২.৯ গুণ নীচে রয়েছে।

ব্রয়লার মুরগির কম্পোজিট (কলিজা, কিডনি এবং গিজার্ডের সমন্বয় ব্রয়লার মুরগির কম্পোজিটে গড়ে ১৪.৫ পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ১৭.২ পিপিবি ডক্সিসাইক্লিন, ১০.৯ পিপিবি আর্সেনিক, ২৩৯.২ পিপিবি ক্রোমিয়াম এবং ৩০৭.৬ পিপিবি লেড রয়েছে, যা সর্বোচ্চ অবশিষ্ট সীমার চেয়ে যথাক্রমে ৬.৮ গুণ, ৫.৮ গুণ, ৩.৬ গুণ, ৪.১৮ গুণ এবং ১৯.৫ গুণ নীচে রয়েছে।

বাজার এবং খামার হতে সংগৃহীত ব্রয়লার মুরগির খাদ্যে গড়ে ০.৮ পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ১৯.২ পিপিবি ডক্সিসাইক্লিন, ৪.১৯ পিপিবি টাইলোসিন, ৭.৬ পিপিবি আর্সেনিক, ২১৫৩.৩ পিপিবি ক্রোমিয়াম এবং ৪৭৮.৬ পিপিবি লেড রয়েছে, যা আর্সেনিক এর ক্ষেত্রে ১৮৪.২ গুণ, ক্রোমিয়াম এর ক্ষেত্রে ৯.২ গুণ এবং লেড এর ক্ষেত্রে ২০.৮ গুণ সর্বোচ্চ অবশিষ্ট সীমার চেয়ে নীচে রয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, দেশের মানুষের আমিসের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে বিভ্রান্তি কর ও গবেষণা ছাড়াই জাতিতে বিভ্রান্তি করার জন্য তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। এ কারণে দেশের এই সেক্টরের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এ কারণে ব্রয়লার মুরগির মাংসের মধ্যে ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে কি না তা গবেষণা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই সেক্টরের উন্নয়নে পোলট্রি খাদ্য আমদানিতে ভ্যাট ও ট্যক্স কমানো হয়েছে। সেক্টরের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব ড. নাহিদ রশিদ, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. শাহেনুর মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন: