সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে দেশ গড়ার চেষ্টা করছি: প্রধানমন্ত্রী
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়া ওঠা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২০ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২০ এর গ্রাজুয়েশন সেরিমনিতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই বাহিনী গড়ে উঠেছে। কাজেই এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদেরকে আপনারা গড়ে তুলবেন, যেন সব সময় জনগণের পাশে থেকে জনগণের কল্যাণে কাজ করেন।”
কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় তাদের ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি মেনে বাংলাদেশ চলছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “আমরা সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছি। সব থেকে বড় কথা আমার দেশের উন্নতি করতে হবে, তার জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে যেখানে যতটুকু সহযোগিতা পাওয়া যায় এবং যাদের কাছ থেকে যতটুকু প্রযুক্তিজ্ঞান পাওয়া যায়, সেইটুকু নিয়েই আমরা আমাদের দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
“এই কথাটা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমরা রাখব। আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। কিন্তু কেউ যদি আমার সার্বভৌমত্বে আঘাত করতে আসে প্রতিঘাত করবার মতো সক্ষমতা যেন আমরা অর্জন করতে পারি, সেভাবেই আমাদের প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতি থাকতে হবে।”
মিয়ানমার থেকে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা তাদের সাথে কখনও সংঘাতে যাইনি, কিন্তু আলোচনা করে এটা সমাধান করার চেষ্টা করছি এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সকলকে আমরা এই আহ্বান জানিয়েছি যে, এই যে বিশাল একটা বোঝা আমাদের উপর, এটা যেন খুব দ্রুত তারা সমাধান করেন।
“কাজেই আমি বলব, সবসময় আমাদের নিজের দেশের নিরাপত্তা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী সদা প্রস্তুত থাকবে এবং আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সেটা করে যাচ্ছি বলেই আজকে সারাবিশ্বে কিন্তু মর্যাদা পেয়েছি।”
সশস্ত্রবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “১৯৯৬ সালে যখন আমরা সরকারে আসি তখন থেকেই যাত্রা শুরু আর ২০০৯ এ সরকার গঠনের পর থেকে এই পর্যন্ত আমরা সশস্ত্রবাহিনীর ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম হয়েছি, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুখ্যাতি পাচ্ছে। তাছাড়া জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অবদান রেখে যাচ্ছে।”
সশস্ত্র বাহিনীকে সব সময় একটি আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন এবং প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানানোর পাশপাশি কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
মহামারীর মধ্যে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হলেও এ সময়ে অনলাইনে সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে বলে উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
“আমাদের লক্ষ্য ছিল জিডিপি আমরা ৮.২ ভাগ অর্জন করব। কিন্তু যেখানে সারাবিশ্ব একেবারে স্থবির হয়ে গেছে, কাজেই শুধু বাংলাদেশ বলে নয়। তারপরও আমরা ৫.৪ ভাগ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাটা ছিল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সারাবিশ্বে একটা দুর্ভিক্ষ হবার সম্ভাবনাও দেখা দিচ্ছে। সেজন্য আমরা আহ্বান করেছি আমাদের এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে এবং প্রত্যেকের ঘরে যেন খাবারটা ঠিকমতো থাকে। সেইদিকে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি।
একইভাবে চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য সেবা নিশ্চিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মহামারীর মধ্যে শিশুদের অনলাইন ও টেলিভিশনে পাঠদানের উদ্যোগ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তারপরও বাচ্চারা যদি স্কুলে যেতে না পারে এটা তাদের উপরে একটা মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি হয়। যখন আমরা প্রস্তুতি নিলাম স্কুলটা খুলব, তখনই কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কটা আসলো।
“আমরা আশা করি হয়ত সামনে আমাদের সেই শুভদিনটা আসবে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা আবার স্কুলে যেতে পারবে, পড়াশোনা শুরু করতে পারবে স্বাভাবিকভাবে। সেভাবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।