সন্তানদের সামনে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়া নারীর লাশ উদ্ধার
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
দুই সন্তানের সামনে সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়া নারীর লাশ চার দিন পর উদ্ধার হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে দুই শিশু সন্তানের সামনেই গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী শেখ লুৎফর রহমান সেতু থেকে মধুমতী নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন আফরোজা খানম নামে ওই নারী। তখন খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গতকাল শুক্রবার সকালে গিমাডাঙ্গা ইটভাটা এলাকায় নদীতে লাশ ভেসে উঠলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তা উদ্ধার করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে থানায় নিয়ে যায় লাশটি।
টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি এ এফ এম নাসিম সাংবাদিদের বলেন, স্বজনরা ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ তাদের কাছে হস্তন্তরের আবেদন করে। আইনিপ্রক্রিয়া শেষে লাশ আফরোজার বাবা ও শাশুড়ির কাছে হস্তন্তর করা হয়। আফরোজা কী কারণে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে তার বড় বোন মাকসুদা বেগম বলেন, আফরোজার খুব অল্পতেই রেগে যেতেন, আত্মহত্যা করার প্রবণতাও তার ছিল। আফরোজার স্বামী ওমান প্রবাসী আলিমুজ্জামান তালুকদার মঙ্গলবার বাড়িতে ৩ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ওই অর্থে পরিবারের নানা খরচ মেটানো সম্ভব হয় বলে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ তার বোনের।
কোটালীপাড়া উপজেলার সোনারগাতী গ্রামের বাকা তালুকদারের ছেলে আলিমুজ্জামানের সঙ্গে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আফরোজা বিয়ে হয় ২০১১ সালে। টুঙ্গিপাড়ার গওহরডাঙ্গা গ্রামে ভাড়াবাড়িতে মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন আফরোজা। স্বামী থাকেন ওমানে। বড় মেয়ে গওহরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলেটি আরও ছোট। আফরোজার মেয়ে বলেন, তাদেরকে সেতুর মাঝে নিয়ে তার মা বলে ‘নদীতে টাকা পড়ে গেছে, টাকা আনতে যাচ্ছি’ বলেই নদীতে ঝাঁপ দেয়।
টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি নাসিম প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে বলেন, ইজিবাইকে সন্তানদের নিয়ে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারপর সন্তানদের কাছে মোবাইল ও ব্যাগ রেখে মধুমতি নদীতে লাফ দিয়েছিলেন আফরোজা। তার সন্তানদের চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়। টুঙ্গিপাড়া ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে খোঁজাখুজি করলেও তাকে পায়নি। শুক্রবার ঘটনাস্থলের আধা কিলোমিটার দূরে লাশ ভেসে ওঠে। আফরোজার ভাবি ফাতেমা বেগম বলেন, লাশ উদ্ধারের পর থেকে ভীষণ কাঁদছে তার সন্তান দুটি। অবুঝ শিশু দুটি মাকে তাদের কাছে ফিরে আসতে বলছে। আফরোজার মৃত্যুতে তার বাবার বাড়ি ও শ্বশুর বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বড় বোন মাকসুদা জানান, থানা থেকে তারা লাশ বাঁশবাড়িয়া গ্রামে নিয়ে গেছেন। তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলে বাঁশবাড়িয়া গ্রামে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।