November 29, 2024
জাতীয়

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে সংসদে নতুন বিল

দৈব-দুর্বিপাকে কোনো এলাকার সংসদ নির্বাচনের সীমানা নির্ধারণ করতে না পারলে বিদ্যমান সীমানায় নির্বাচন হওয়ার বিধান রেখে জাতীয় সংসদের ‘নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিল-২০২১’ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে নির্বাচন কমিশনকে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যা বিদ্যামান আইনে নেই। এই আইন কার্যকর হলে ১৯৭৬ সালের ‘দ্য ডিলিমিটেশন অব কন্সটিটিউয়েন্সিস অর্ডিনেন্স’ রহিত হবে।

শনিবার (৩ জুন) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। পরে তা পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলে বিদ্যমান আইনের ৮ নম্বর ধারায় একটি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে, ‘দৈব-দুর্বিপাকে বা অন্য কোনো কারণে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করা না গেলে, বিদ্যমান সীমানার আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

সংসদের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং বাংলায় আইন করতেই মূলত বিলটি আনা হয়েছে।

সামরিক সরকারের আমলে জারি হওয়া ‘দ্য ডিলিমিটেশন অব কন্সটিটিউয়েন্সিস অর্ডিনেন্স’-এর সংশোধন করতে নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল। সেগুলো আমলে নেয়া হয়নি।

পরে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করে বিদ্যমান আইনগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। একাদশ জাতীয় সংসদের আগে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইনটি সংস্কারের ঘোষণাও দেয়। কিন্তু সেটা হয়নি। পরে বিদ্যমান আইনেই তারা সীমানা পুনর্বিন্যাস করে ওই নির্বাচন সম্পন্ন করে।

২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে পাঠায় ইসি। ইসি তার খসড়ায় বিদ্যমান জনসংখ্যা কোটার ভিত্তিতে আসন বণ্টনের সঙ্গে ভোটার সংখ্যা যুক্ত করার প্রস্তাব করেছিল। এছাড়া সিটি করপোরেশন, বড় বড় শহরের ও পল্লী এলাকার ভারসাম্য রক্ষার কথাও বলা হয় ইসির প্রস্তাবে।

সংবিধান ও সীমানা নির্ধারণ আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংবিধানের ১১৯ (গ) অনুচ্ছেদে ইসিকে সংসদে নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। ১২৪ অনুচ্ছেদে ইসিকে সংসদ আইনের দ্বারা নির্বাচনী এলাকার সীমা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ নির্বাচন এলাকা সীমানা নির্ধারণ বিধান অধ্যাদেশ-১৯৭৬ জারি করা হয়। এরপর থেকেই এই অধ্যাদেশের বলে সংসদ নির্বাচনের সীমানা পুনর্বিন্যাস হয়ে আসছে। নতুন আইন হলে এর বিধানে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

বিদ্যমান আইনের ৮টি ধারার স্থলে প্রস্তাবিত আইনে ৯টি ধারার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন ধারাটিতে আইনের অধীনে বিধি প্রণয়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে বিধি প্রণয়নের সুযোগ নেই। বিদ্যমান আইনের ধারা-১ একটি নতুন উপধারার প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে আইনটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিলে আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে উল্লিখিত সংখ্যক সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পুরো দেশকে ওই সংখ্যক একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভৌগলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা এবং আদমশুমারির ভিত্তিতে যতদূর সম্ভব বাস্তবভিত্তিক বণ্টনের কথা বলা হয়।

বিলের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, ইসির সীমানা নির্ধারণের বিষয় নিয়ে দেশের কোনো আদালত বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন-২০১১ এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে সামরিক ফরমান দ্বারা জারি করা দ্য ডিলিমিটেশন অব কন্সটিটিউয়েন্সিস অর্ডিনেন্স-১৯৭৬ এর কার্যকারিতা লোপ পায়। যার প্রেক্তেএ জনস্বার্থে আবশ্যক বিবেচনায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জারি করা কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরকরণ (বিশেষ বিধান) আইন-২০১৩ দ্বারা অন্যান্য কতিপয় অধ্যাদেশের সঙ্গে এ অর্ডিনেন্সকেও কার্যকর রাখা হয়।’

‘পরে সরকার সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলো সব স্টেকহোল্ডার এবং সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে বাংলায় নতুন আইন প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে অর্ডিনেন্সটির প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে তা রহিত করে সংশোধনসহ পুনপ্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত বিলটি প্রস্তুত করা হয়েছে’ বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রস্তাবিত বিলে সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে উল্লিখিত সংখ্যক একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন কমিশনের কার্যপদ্ধতি, ক্ষমতা অর্পণ ও কমিশনকে সহায়তা প্রদান এবং কমিশন কর্তৃক বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি আইনে পরিণত হলে জাতীয় সংসনের একক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ কাজ সুচারুরূপে সম্পাদন করা সম্ভব হবে।’

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *