সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় আইন চায় নির্মূল কমিটি
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সা¤প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরে সংগঠনটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, ইউনিফর্ম না পরে স্কুলে আসায় মিরপুরের আলীমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ২৪ জুলাই সতর্ক করা হলে তার পরিবারের সদস্যরা এসে প্রধান শিক্ষক রমেশ কান্তি ঘোষের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণ করেন এবং তার কক্ষে ভাংচুর চালান।
পরে ছাত্রীর ভাই রাকিবুল হাসান ফেসবুকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে লেখেন, প্রধান শিক্ষক বলেছেন ‘হিজাব-রোবখা পরে স্কুলে যাওয়া যাবে না’। এ নিয়ে উভয় পক্ষ থানায় অভিযোগ করে, যার তদন্ত চলছে।
হিন্দু স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফেসবুকে ‘সা¤প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী’ ওই বক্তব্য ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বলে অভিযোগ করেন শাহরিয়ার কবির। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমেশ কান্তি ঘোষ এবং তার পরিবারের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি মামলার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
ফেইসবুকে মিথ্যা সা¤প্রদায়িক বক্তব্য ছড়িয়ে দিয়ে হিন্দু পাড়ায় হামলার ঘটনার ভুক্তভোগী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রসরাজ দাস ও সঞ্জু বর্মণকে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করে নির্মূল কমিটি। শাহরিয়ার বলেন, প্রায় তিন বছর আগে রসরাজের ফেসবুক থেকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার মিথ্যা বক্তব্য সেঁটে দিয়ে হতদরিদ্র জেলেপাড়ায় হামলা চালানো হয়। কিন্তু রসরাজ দায়ী না হলেও তিন বছর ধরে তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, ৯০ দিনের মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও রসরাজের ক্ষেত্রে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনও দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে সঞ্জু বর্মণকে ‘অক্ষর-জ্ঞানহীন’ পরিচয় দিয়ে নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, গত বছর সঞ্জুর নাম ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে ইসলাম অবমাননার একটি দীর্ঘ পোস্ট দেওয়া হয়। তারপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জামিনে বের হওয়ার পর সঞ্জু সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে থাকে।
অবিলম্বে রসরাজের মামলা প্রত্যাহার এবং সঞ্জুর মামলা গোয়েন্দা তদন্তের পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানান শাহরিয়ার কবির।
সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে ধর্মীয় বা জাতিগত কারণে সংখ্যালঘু হওয়ার জন্য কেউ লাঞ্ছলা বা নির্যাতনের শিকার হবেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এজন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য আইন করাটা অতি জরুরি প্রয়োজন।
নিজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপব্যবহারের শিকার হওয়ার দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, আমি সরকারকে বলবো, ফেসবুক একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যে মাধ্যম আমাদেরকে ঘৃণা-দাঙ্গাতে প্ররোচনা দেয়, তাহলে সেই মাধ্যম না থাকলে কী অসুবিধা হবে, সেটা আমি বুঝতে পারছি না। সেবিষয়ে আমাদের যে মন্ত্রী আছেন, তাকে জবাবদিহি করতে হবে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সহ-সভাপতি শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুলসহ অন্যদের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।