শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জাতির পিতাকে স্মরণ
বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর শোকাবহ পরিবেশে জাতি স্মরণ করেছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ৷ দিনটি ছিল জাতীয় শোক দিবস ৷ এবারের শোক দিবসে মূল দাবি ছিল বঙ্গবন্ধুর সাজাপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের দ্রুত ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা।
শনিবার (১৫ আগস্ট) মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী।
এ দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযথ মর্যাদায় ঢাকাসহ সারাদেশে দিবসটি পালন করা হয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন, সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেছে।
এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন হচ্ছে। এরমধ্যেই ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালিত হলো। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে প্রতিকূল পরিবেশে দিবসটি পালিত হয়। কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি চিন্তায় রেখে সব কর্মসূচি নেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় অনলাইনে।
দিনটির শুরুতে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে তার প্রতিকৃতিতে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, বিভন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
সকাল সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। সশস্ত্রবাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদর্শন করে। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার মেয়ে সায়েমা ওয়াজেদ পুতুলও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর পরপরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ৷ এরপর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। করোনা ভাইরাসজনিত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাজার হাজার সানুষের স্রোত গিয়ে মিশে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়ক থেকে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে যান। সেখানে ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে নিহত তার মা, ভাই, পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয়দের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।
শোক দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, কালো ব্যাজ ধারণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ১৫ আগস্ট নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুস্থ ও গরীব মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর থানা ও ওয়ার্ড ইউনিট।