শেষ পর্যন্ত মাজেদের দাফন হল নারায়ণগঞ্জের শ্বশুরবাড়িতে
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আব্দুল মাজেদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দাফন করা হয়েছে।
সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, সম্ভুপুরা ইউনিয়নের হোসেনপুর এলাকায় শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে রোববার ভোরে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এর আগে রাত ১২টা ১ মিনিটে কেরাণীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মাজেদের গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কালীগঞ্জের বাটমারায়। তার বাবার নাম আলী মিয়া চৌধুরী, মায়ের নাম মেহেরজান বেগম।
শ্বশুরবাড়িতে দাফনের কারণ সম্পর্কে মাজেদের চাচাশ্বশুর আলী আক্কাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাওয়া ফেরিঘাট বন্ধ থাকায় মাজেদকে এখন ভোলায় দাফন করা সম্ভব না। তাই সোনারগাঁওয়ে শ্বশুরবাড়িতে দাফন করা হবে।”
মাজেদের শ্যালক শহীদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “সোনারগাঁওয়ে মরদেহ নেওয়ার পর প্রশাসনের সহায়তায় জানাজা ও দাফন হয়। শান্তিপূর্ণভাবেই সব সম্পন্ন হয়েছে, কোনো সমস্যা হয়নি।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যে ছয় আসামি পলাতক ছিলেন, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মাজেদ তাদেরই একজন।
সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অন্য খুনিদের মত মাজেদও ‘পুরস্কার হিসেবে’ সরকারি চাকরিতে উঁচু পদ পেয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খুললেও দুই দশকের বেশি সময় ভারতে পালিয়ে থেকে বিচার এড়ান মাজেদ।
অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষে ২০০৯ সালের নভেম্বরে সর্বোচ্চ আদালত থেকে ১১ জনের ফাঁসির রায় আসে। তাদের মধ্যে পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি কার্যকর করা হলেও মাজেদসহ ছয়জন পলাতক থাকেন।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ৭ এপ্রিল ভোরে ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ৭২ বছর বয়সী মাজেদকে।
দীর্ঘদিন পলাতক থেকে আপিলের সুযোগ হারানো মাজেদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করলে তাও খারিজ হয়ে যায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ভাষায়, বঙ্গবন্ধুর এই পলাতক খুনিকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারার বিষয়টি মুজিববর্ষে জাতির জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার।
এ বছরই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে বাংলাদেশ, যার সমাপ্তি ঘটবে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে।