শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব, নূরের ভিন্নমত
তিন দশক পর নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নতুন ডাকসুর প্রথম সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব উঠলে তাতে ভিন্নমত জানিয়েছেন ভিপি নুরুল হক নুর।
গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ভোটে গঠিত ডাকসুর প্রথম সভা হয় শনিবার সকালে ডাকসু ভবনে। এতে সভাপতিত্ব করেন পদাধিকার বলে ডাকসুর সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।
এই সভায় ডাকসুর নবনির্বাচিত ২৫ সদস্যের সবাই উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ভিপি নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হুসেন বাদে সবাই ছাত্রলীগের।
উপাচার্য আখতারুজ্জামান সভায় বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহ ও ইচ্ছায় ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাচ্ছে তাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করা হোক।”
তখন ভিপি নূর এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, “ছাত্র সমাজের বড় একটি অংশ নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পর্ষদে প্রধানমন্ত্রীর মতো সম্মানিত ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত না করাই ভালো হবে।”
দীর্ঘ তিন দশক পর আদালতের আদেশে গত ১১ মার্চ ডাকসু এবং ১৮টি হল সংসদের নির্বাচন আয়োজনের পর তা শেষ হয় কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে কয়েকটি প্যানেলের বর্জনের মধ্য দিয়ে।
কোটা আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাম জোট, ছাত্রদল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দুটি জোটের প্যানেল নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেয়।
কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনকারীদের নেতা নুর ভিপি হিসেবে দায়িত্ব নিলেও পুনর্নির্বাচনের দাবিকেও সমর্থন করছেন।
আড়াই ঘণ্টার প্রথম বৈঠকে হল থেকে বহিরাগতদের অপসারণ, গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি বন্ধ করা এবং মেধার ভিত্তিতে হলে সিট বরাদ্দ নিয়ে সরব ছিলেন নুর।
বৈঠক শেষে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “ডাকসুর প্রায় সকলেই সহমত জ্ঞাপন করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার জন্য। অনারারি লাইফ মেম্বারশিপ। প্রস্তাবনাটি ধন্যবাদের সাথে গ্রহণ করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী সভায় এজেন্ডা আকারে এনে এটি করা হবে।”
ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার প্রস্তাবটি ২৩ অনুপাত ২ ভোটে পাস হয়েছে।”
অন্যদিকে ভিপি নূর বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে, কিন্তু এখনও এর কোনো সমাধানে আমরা পৌঁছাইনি।”
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধান। এখানে ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ দেওয়াটা তার জন্য বড় কিছু নয়।
“যেহেতু এই নির্বাচনটি সার্বজনীনভাবে সব শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। একটি অংশ এই নির্বাচন বর্জন করেছে। আটজন শিক্ষক, যারা একেবারেই নিরপেক্ষ, তারা এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এখানে অনিয়মের কথা বলেছেন। সুতরাং এই বিতর্কিত নির্বাচনে চাই না প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য হিসাবে ঘোষণা করা হোক।”
পরে ‘ভালো’ নির্বাচন হলে প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য হিসাবে চাইবেন কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে নুর বলেন, “সেটা নিয়ে অগ্রীম কিছু বলতে চাই না। যখন হবে তখন দেখা যাবে।”
বহু প্রতীক্ষিত প্রথম বৈঠকের আলোচনা নিয়ে ভিপি নুর বলেন, “হলে গণরুম, গেস্টরুম এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় সিট দেওয়া বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মেধার ভিত্তিতে হলে সিট বরাদ্দের প্রস্তাব করেছি। অছাত্র বহিরাগতদের হল থেকে বের করা, ফিক্সড রিকশা, রিকশা ভাড়া নির্ধারণ ও এক মুখী লেইন নিয়ে আলোচনা করেছি।”
জিএস গোলাম রাব্বানী জানান, দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ডাকসুর নতুন পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
“সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।”
উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, “এর (বৈঠক) মাধ্যমে নতুন পর্ষদ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করল। বৈঠকে তাদের আলাপচারিতা ও বক্তব্য অনেক আশাপ্রদ। তারা অত্যন্ত বন্ধুসুলভ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে।”