শৃঙ্খলা ভঙ্গ : খুবি’র দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিস্কার, পাঁচজনকে শাস্তি
দ. প্রতিবেদক
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন শিক্ষকের পথ আটকিয়ে তাঁদের সাথে গুরুতর অসদাচরণ করা, একাডেমিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি, তদন্তকমিটির সম্মুখে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি ও অন্য শিক্ষার্থীকে কমিটির সম্মুখে বক্তব্য না দেয়ার জন্য চাপ প্রদান, ব্যক্তিগতভাবে পাঠানো তদন্ত কমিটির গোপনীয় চিঠি উস্কানিমূলক শিরোনাম দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা বা করানোর অভিযোগে বাংলা এবং ইতিহাস ডিসিপ্লিনের দুই জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। শৃঙ্খলা বোর্ডের সভায় সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপরাধের মাত্রানুযায়ী শাস্তিমূলক এই ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
অপরদিকে পৃথক ঘটনায় র্যাগিংয়ের অভিযোগে ইংরেজি ডিসিপ্লিনের ৫ জন শিক্ষার্থীকে শৃঙ্খলা বোর্ড বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করেছে। শৃঙ্খলা বোর্ডে সদস্য সচিব ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মোঃ শরীফ হাসান লিমন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে শাস্তি প্রাপ্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিলের কাছে তাদের শাস্তির বিষয়ে আপিল করতে পারবে।
জানা যায়, গত বছর ১ জানুয়ারি কিছু শিক্ষার্থী যখন কয়েকটি বিষয়ে দাবি তুলে সমাবেশ করে তখন দুই জন শিক্ষক তাঁর একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য একাডেমিক ভবনে যাওয়ার পথে তাঁদের পথরুদ্ধ করে এবং তাঁদের সাথে গুরুতর অসদাচরণ করে। ঐ দুই শিক্ষক এ ঘটনায় ভীষণভাবে অপমানিতবোধ করেন এবং একাডেমিক কার্যক্রমে বাঁধাদানের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে ঐ দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। শিক্ষকদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। অভিযুক্ত দুইজন শিক্ষার্থীর মধ্যে ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমামুল ইসলাম (রোল নং- ১৭২৭০৭) কে শৃঙ্খলা কমিটি দুই বছরের (৪ টার্ম) জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার (শিক্ষাবর্ষ ২০১৯-২০২০ ও ২০২০ -২০২১) করে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ প্রমাণিত হয় তা হলো ১) দুই জন শিক্ষকের পথ আটকানো ও তাদের সাথে গুরুতর অসদাচরণ করা। ২) তদন্ত কমিটির সম্মুখে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি ও অন্য শিক্ষার্থীকে কমিটির সম্মুখে বক্তব্য না দেয়ার জন্য চাপ প্রদান। ৩) একাডেমিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করা। ৪) ব্যক্তিগতভাবে পাঠানো তদন্ত কমিটির গোপনীয় চিঠি উস্কানিমূলক শিরোনাম দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা বা কাউকে দিয়ে পোস্ট করানো। ৫) তদন্ত কমিটির সাক্ষাৎকার গোপনে রেকর্ড করার চেষ্টা করা।
অপর শিক্ষার্থী বাংলা ডিসিপ্লিনের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন নোমান (রোলনং- ১৮১৯৫৭) কে এক বছরের (২ টার্ম) জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার (শিক্ষাবর্ষ ২০১৯-২০২০) করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ১) দুই জন শিক্ষকের পথ আটকানো ও তাদের সাথে গুরুতর অসদাচরণ করা। ২) তদন্ত কমিটির সম্মুখে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি ও অন্য শিক্ষার্থীকে কমিটির সম্মুখে বক্তব্য না দেয়ার জন্য চাপ প্রদান। ৩) একাডেমিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টিকরা।
এছাড়া র্যাগিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত ৫ শিক্ষার্থী সবাই ইংরেজি ডিসিপ্লিনের। এবং মধ্যে মসিউর রহমান রাজা (রোল: ১৭১৪৩৯) কে দুই বছরের(৪ টার্ম) জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার (শিক্ষাবর্ষ ২০১৯-২০২০ ও ২০২০ -২০২১) করা হয়েছে। রাজ বর্মণ বিধান (রোল: ১৭১৪০৪) কে দুই বছরের (৪ টার্ম) জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার (শিক্ষাবর্ষ ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২০২১) করা হয়েছে। মিনহাজুর রহমান (রোল: ১৭১৪৩৬) এক বছরের (২ টার্ম) জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার (শিক্ষাবর্ষ ২০১৯-২০২০) করা হয়েছে। সাবেরুল বাশার নিরব (রোল: এম এ -২০১৪৩১) এর এক বছরের জন্য সার্টিফিকেট স্থগিত করা হয়েছে। অপর শিক্ষার্থী ফাহাদ রহমান অঝোর (রোল: ১৭১৪৫১) কে ১০,০০০/- (দশ হাজার টাকা) জরিমানা এবং ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোন কাজে লিপ্ত হবে না মর্মে অভিভাবক সহমুচলেকা প্রদান করতে হবে।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ