শীতে ঠোঁটের যত্ন
এই ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় অনেকেই ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়েন। শীতের সময়ে ঠোঁট ফাটা সমস্যা খুব সহজ কিছু উপায়ে এড়াতে পারেন। অভ্যাস বদল: যাদের ঠোঁট ভীষণ শুকিয়ে যায় তাদের একটি বদ অভ্যাস তৈরি হয়। কিছুক্ষণ পর পর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো। অনেকে ভাবেন এটি করলে ঠোট শুকাবে না। কিন্তু এতে ঠোঁট আরো বেশি শুকিয়ে যায় এবং ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। তাই এই কাজটি থেকে বিরত থাকুন। মানসম্মত প্রসাধনী : ঠোঁটে লিপজেল বা ভেসলিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভালো ব্র্যান্ডকে প্রাধান্য দিন। অনেকেই যে কোনো ব্র্যান্ডের লিপজেল বা ভেসলিন ব্যবহার করে থাকেন। মানহীন পণ্য ব্যবহারে ঠোঁটের ক্ষতির পাশাপাশি ঠোঁটের শুষ্কতার ভাব বেশ বেড়ে যায় । পানি পান: প্রাকৃতিক উপায়ে ঠোটের শুকিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে চাইলে প্রচুর পরিমাণে পানি খান। এতে করে ঠোঁটের ত্বকে আদ্রতা বজায় থাকবে আর আপনি ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া থেকে মুক্তি পাবেন। অসাবধানতা: ফেসওয়াশ ব্যবহার করার সময় একটু সাবধানে ব্যবহার করুন যাতে ঠোঁটে না লেগে যায়। কারণ এতে ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। মুখে সাবান ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও এ সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
ঠোঁটের যত্নে…
শীতে শুষ্ক হয়ে পড়ে ত্বক ও ঠোঁট। শুষ্ক ঠোঁট হারায় সজীবতাও। তাই এ সময় ত্বকের যত্নের পাশাপাশি ঠোঁটের জন্যও চাই বিশেষ যত্ন। ‘ঠোঁট ফাটার কারণ হচ্ছে ঠোঁট ও শরীরে আর্দ্রতার অভাব। শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে বলে ঠোঁট আর্দ্রতা হারায় খুব তাড়াতাড়ি। তাই প্রয়োজন ঠোঁটের যত্ন নেওয়া। ’ ‘ফাটা ও অপরিষ্কার ঠোঁট নিজেরও অস্বস্তির কারণ। একটু খেয়াল রাখলে এবং সামান্য যত্ন নিলেই এ সময় ঠোঁট সুন্দর রাখা যায়। ’ প্রচুর পানি পান করুন। প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে বেরোবেন না, বিশেষ করে যখন ঠান্ডা বাতাস থাকে অথবা খুব তীব্র শীত পড়ে, তখন ঘরে থাকতে চেষ্টা করুন। বাইরে গেলে মুখের উপরিভাগে স্কার্ফ বা কোনো কাপড় ব্যবহার করতে পারেন; যা আপনার ঠোঁটকে শীতের হাওয়া থেকে আড়াল করে রাখে। কখনোই জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজাবেন না, আলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ঠোঁটকে বাঁচাতে লিপবাম ব্যবহার করতে পারেন। আর্দ্রতাকারক যন্ত্র হিউমিডিফায়ার কিনতে পারেন। কারণ, শীতে ঘরের ভেতরটাও শুষ্ক থাকে। হিউমিডিফায়ার আপনার ঘরের আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেবে। ফাটা ঠোঁটের আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেওয়া কঠিন। চেষ্টা করুন ফাটা ঠোঁটকে যতটা সম্ভব আর্দ্র রাখতে। ঠোঁট ফাটা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত শুষ্ক বাতাস থেকে ঠোঁটকে সুরক্ষিত রাখুন। ফাটা ঠোঁটে কখনো কখনো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, তাই ঠোঁট ফাটার ব্যাপারে হতে হবে সচেতন। জেনে নিন কিছু পরামর্শ। নিয়মিত ঠোঁটে ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। শীতকালে পানি যেমন কম খাওয়া হয়, মুখও কম ধোয়া হয়। তাই কথা বলার সময় অনুভব করেন, আপনার ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে। যখনই এমন অনুভব করবেন, তখনই ঠোঁটে ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। বাইরে বেরোলে সঙ্গে লিপবাম রাখতে পারেন। শীতে বাইরে গেলে ঠোঁট বেশি ফাটে এবং ঠোঁটে ধুলাও লেগে যায়। তখন মাঝেমধ্যে ঠোঁট একটু ধুয়ে নিয়ে লিপবাম লাগিয়ে নিন। ঠোঁট ধোয়ার সুযোগ না পেলে প্রথমে একটু লিপবাম লাগিয়ে সেটি মুছে ফেলুন। এতে আপনার ঠোঁট পরিষ্কার হবে। তারপর আবার লিপবাম লাগান। লিপস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজারযুক্ত লিপস্টিক বেছে নিন। যদি ম্যাট লিপস্টিক লাগাতেই চান, সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে প্রথমে তুলা বা টিস্যুর সাহায্যে সামান্য একটু লিপবাম ঠোঁটে লাগিয়ে নিন এবং তারপর লিপস্টিক লাগান। শীতে অনেকের ঠোঁট কালো হয়ে যায় এবং খুব বেশি ফেটে যায়। তারা ঘরোয়া পদ্ধতিতেই নিতে পারেন বাড়তি যত্ন। গোলাপের পাপড়ির সঙ্গে মধু বা মাখন মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন সারা রাত।
ঠোঁটের যত্নের খুঁটিনাটি
‘ঠোঁটের গড়ন মোটামুটি চার ধরনের। পুরু ঠোঁট, পাতলা ঠোঁট, চওড়া ঠোঁট আর ছোট ঠোঁট। এই মৌসুমে ঠোঁটে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। কখনো ঠোঁট ফাটে, কখনো বা কালচে ভাব চলে আসে। ’ ঠোঁট ফাটাটা অস্বস্তিকর ও কষ্টদায়ক। শীতে শুকনা আবহাওয়ার কারণেই ঠোঁট বেশি ফাটে। ঠাণ্ডার কারণে নাক বন্ধ থাকে। এ কারণে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। ঠোঁট ফাটলে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস কম নিতে হবে। তাহলে ঠোঁট ফাটা কমে যাবে। ঘি বা খাঁটি সরষের তেল হালকা গরম করে নাভিতে লাগালে ভেতর থেকে ঠোঁট ফাটার প্রবণতা কমে যায়। এই কাজটি করতে হবে রাতে ঘুমানোর সময়। টানা কয়েক দিন লাগালে শীতের সময় ঠোঁট ফাটা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ঠোঁট ফাটলে অনেক সময় ত্বকের মরা অংশ জমে থাকে ঠোঁটের ওপর। এটা আটকাতে রাতে ঘুমানোর সময় বাদাম তেল লাগাতে হবে ঠোঁটে। মরা অংশ কখনোই টেনে তোলা যাবে না।
ঠোঁট কালচে হয়ে গেলে সেটাও হালকা করার উপায় আছে। এক টেবিল চামচ গোলাপের পাপড়ির পেস্ট আর এক টেবিল চামচ গ্লিসারিন এই সমস্যার সমাধান এনে দেবে। নিয়মিতভাবে ঠোঁটে মাখলে কালচে ভাব দূর হয়ে হালকা গোলাপি আভা চলে আসবে। মিশ্রণটি বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। মাখনের সঙ্গে জাফরান মিশিয়েও ঠোঁটে লাগাতে পারেন। এতে করে লালচে আভা চলে আসবে ঠোঁটে। ঠোঁটকে মসৃণ রাখতেও সাহায্য করবে। খুব বেশিক্ষণ ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে রাখা উচিত না। সব সময় ভালো ব্র্যান্ডের লিপস্টিক ব্যবহার করবেন। পুরু ঠোঁট সাজানোর সময় লিপ পেনসিল দিয়ে ভেতর দিকে আঁকতে হবে। এতে করে ঠোঁটটা আকারে একটু ছোট দেখাবে। পাতলা ঠোঁট সব সময় একটু বাইরের দিক দিয়ে আঁকতে হবে। ছোট ঠোঁট দুই পাশ দিয়ে একটু টেনে আঁকতে হবে। অন্যদিকে লম্বা ঠোঁটকে আঁকার মাধ্যমে পাশ থেকে কমাতে হবে। ঠোঁটে অনেকক্ষণ লিপস্টিক রাখতে চাইলে সেটাকে ম্যাট করে লাগান। গ্লসি লিপস্টিক দিয়ে ওপরে গোলাপি রঙের পাউডার দিলেও ম্যাট হয়ে যাবে। জলপাই তেল ও লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া লেবু, লবণ, মধু ও জলপাই তেল একসঙ্গে মিশিয়েও স্ক্রাবার তৈরি করা যাবে। সপ্তাহে দুই দিন এটি ব্যবহারে ঠোঁটের মরা চামড়া উঠে যাবে।
(সংগৃহীত)