শিরোমণি চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ সাইফুর’র খুঁটির জোর কোথায়?
* নিরাপত্তাহীনতায় হাসপাতাল পরিচালকের জিডি
* হাসপাতালের রোগী নিজ চেম্বারে নেয়ার অভিযোগ
* কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার
দ: প্রতিবেদক
একের পর এক অভিযোগের পরও খুলনার শিরোমণিস্থ বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তা নিয়ে জনমনে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতাল থেকে রোগী নিজ চেম্বারে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে খারাপ আচরণ ও স¤প্রতি হাসপাতালের পরিচালককে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এরপরও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে ‘ডাঃ সাইফুর রহমানের খুঁটির জোর কোথায়?’।
সম্প্রতি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক বি এম সাইফুর রহমান ও হাসপাতালের কাউন্সিলার গিয়াসউদ্দিন জমাদ্দার হাসপাতালের পরিচালক আব্দুল হান্নানের অফিস রুমে গিয়ে হুমকি-ধামকি দেন। যার কারণে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন দাবি করে পরিচালক খানজাহান আলী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। যার নং ৯৬৫। তাং-২৪/০৬/২০১৯ ইং।
এছাড়া বিএনএসবি হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ শারফুদ্দিন আহম্মেদ স্বাক্ষরিত ডাঃ বি.এম সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে ডাঃ সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে চাকুরীর বিধি লংঘন করে প্রতি সপ্তাহে দুই দিন হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকা, ইচ্ছামতো হাসপাতালে যাওয়া-আসা, আউটডোরের রোগী না দেখা এছাড়াও বিভিন্ন কারণে অন্যান্য সহকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ-অভিযোগ চলে আসছে। এর কারণে হাসপাতালের কার্যক্রমও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসা সেবা নিতে আসা একাধিক রোগী জানান, চিকিৎসার জন্য চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাঃ সাইফুর রহমান তার ব্যক্তিগত চেম্বার ময়লাপোতা আই প্যাভিলিয়ানে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। শুধু তাই নয় হাসপাতালের কাউন্সিলার আফরোজা ইয়াসমিন ইতির মাধ্যমে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ডাঃ সাইফুর রহমানের ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
সম্প্রতি জনৈকা মহিলা বোর্ড সদস্যার প্রশ্নের জবাবে ডাঃ সাইফুর রহমান বলেন, “কথা না শুনলে মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে” তার এই মন্তব্যের পর হাসপাতালের ডাক্তার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও হাসপাতালের পরিচালকের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করায় আবারও আলোচনায় আসেন ডাঃ সাইফুর। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে হাসপাতালের অপর চিকিৎসক ডাঃ সেলিনার সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন তিনি।
ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্য হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, হাসপাতালের কাজ বন্ধ করা, কর্মচারীদের মধ্যে বিভক্তি, হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট/পরিচালক চরম অপমান, অশ্রদ্ধা করার অভিযোগ রয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশে।
হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বনামধন্য এই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে সেবা দিয়ে যাচ্ছি সুনামের সাথে কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য ডাঃ সাইফুর রহমান সম্প্রতি হাসপাতালের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছেন তা মোটেও কাম্য নয়।
হাসপাতালের একাধিক কর্মকতা কর্মচারীরা বলেন, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে সকল বোর্ড সদস্য পরিচালক বা চেয়ারম্যান মহোদয় বিষয়টি মিটিং এর মাধ্যমে আলোচনা স্বাপেক্ষে সমাধানের চেষ্টা করবে কিন্তু শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য ডাঃ সাইফুর রহমান অপটিক্যাল সেল্সম্যান ইয়াদুল ইসলাম, খাইরুল ইসলাম, গিয়াসউদ্দিন জমাদ্দার নেতৃত্ব দিয়ে কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। এছাড়াও হাসপাতালের নার্স মিনু দাসীকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ডাঃ সাইফুরের বিরুদ্ধে। নানা বিতর্কের কারণে তার পূর্বের কর্মস্থল রূপসা সিএসএস চক্ষু হাসপাতাল কুদির বটতলা খুলনা ও বরিশাল ইসলামিয়া আই হাসপাতাল থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ সাইফুর রহমান বলেন, ‘কিছুদিন ধরে দুই দফা দাবিতে হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনকে স্থগিত করতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে শোকজ করা হয়েছে। যার কোনটিরই প্রমাণ নেই। এছাড়া পরিচালকের কক্ষে গিয়েছিলাম আমাদের দাবি উত্থাপন করতে, কিন্তু তিনি সেটাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করেছেন।’