শিক্ষার্থীদের সহনশীল করে তুলছে ‘বি রেজিলিয়েন্ট’
সহনশীলতা শব্দটি বেশ পরিচিত মনে হলেও শিশুদেরকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সহনশীল করে গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটি একেবারে নতুন। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রেখে এবং বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে সঠিক সময়ে সঠিক পথ দেখানোর উদ্দেশ্যেই যাত্রা শুরু টিম “Be Resilient-সহনশীল হই” এর (‘আমরা নতুন নেটওয়ার্ক’ ইনিশিয়েটিভ)।
বিশেষ করে স্কুলগামী শিশু-কিশোরদেরকে বুলিং, ডিপ্রেশন থেকে বের হয়ে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সহনশীল আচরণ বজায় রাখার মাধ্যমে কঠিন পরিস্থিতি কিভাবে সামলে নেওয়া যায় সেই শিক্ষাদানের জন্যই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনার কয়েকজন তরুণের নেতৃত্বে গত বছরের শেষের দিকে এ কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়।
তারা হলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মো. সৌমিক আহমেদ, একই ডিসিপ্লিনের সাবরিনা নুসরাত, এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের ফারজানা ইসলাম নাফিলা, পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের আনিকা তাহসিন, ইংরেজি ডিসিপ্লিনের রেজওয়ান আহম্মেদ ও খুলনার স্থানীয় তরুণ মীলন হীরা।
কার্যক্রমের মধ্যে তারা বিভিন্ন স্কুলে সার্ভে পরিচালনা করে সমস্যা এবং এর পিছনের কারণগুলো নির্ধারণ করেন। পরবর্তীতে সে অনুযায়ী তারা সহনশীলতার চর্চার ব্যাপারটিকে বিভিন্ন মডিউলে ভাগ করে ওয়ার্কশপ পরিচালনা করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি খুলনার সেনহাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে একদিন ব্যাপী ওয়ার্কশপের আয়োজন করে টিম ‘Be Resilient- সহনশীল হই’। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে এই ওয়ার্কশপের উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব হাবিবুর রহমান মল্লিক।
টিমের সদস্যরা বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে অধিকাংশ সময়ে আমরা এমন কিছু পরিস্থিতির সম্মুখীন হই যখন আমরা নিজেদেরকে সংযত রাখতে পারিনা, হঠাৎ করেই ক্ষেপে যাই, অন্যের সাথে বাজে আচরণ করি। অল্পতেই হাতাহাতি, মারামারি পর্যায়ে চলে যাই আমরা অধিকাংশই। এর পেছনের কারণ অনুসন্ধান করলে আমরা দেখতে পাই, এসব কিছুই হয় আমাদের অসহনশীলতা অভাবের কারণে। তাই ব্যক্তি জীবনে কথায়, কর্মে ও আচরণে আমাদের আরও বেশি সহনশীল হওয়া প্রয়োজন। বয়ঃসন্ধিকাল চলছে বা সবেমাত্র বয়ঃসন্ধি পার হওয়া শিক্ষার্থীদের ভেতর এই শুভ চিন্তা পৌঁছে দিতে পারার মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
সমাজের প্রতিটা মানুষ একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে, মেয়েদের কাজকে সম্মান করবে, নতুন উদ্ভূত সমস্যায় চটজলদি সিদ্ধান্ত নিবে না বরং আরেকটু সময় নিয়ে ভাববে আর সহনশীল আচরণের ভেতর দিয়ে সমস্যার সমাধান করবে। আর এই শিক্ষা ছোট বেলা প্রতিটি শিক্ষার্থীর মন ও মননে পৌঁছে দেওয়াই এই প্রকল্পের লক্ষ্য।
প্রজেক্টটির অন্যতম কো-ফাউন্ডার এবং সংগঠনটির মুখপাত্র ফারজানা ইসলাম নাফিলা বলেন, “সহনশীলতা বিষয়টা এমন যা কেউ জন্মগতভাবেই নিয়ে আসে না। বরং এটা প্রতিনিয়ত তৈরি করতে হয়। একজন মানুষকে নতুনভাবে আবিষ্কার করা যায় যখন সে সহনশীল হয়। বিভিন্ন পরিস্থিতিকে সামলে নেওয়া এবং উদ্যমের সাথে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি আসে সহনশীলতা থেকে।
এমন ভাবার সুযোগ নেই যে সহনশীল মানুষের জীবনে হয়ত অন্য মানুষদের তুলনায় সমস্যা বা সংকটময় মুহূর্ত কম আসে। বরং তাদের জীবনেও একইভাবে বিভিন্ন সমস্যা আসে কিন্তু তারা এই সমস্যা গুলো মোকাবেলা করে মানানসই বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে। অস্থিতিশীল পরিবেশে নিজেকে সুস্থভাবে টিকিয়ে রাখার অন্যতম সহায়ক হলো “সহনশীলতা”। শিশু বয়সেই সহনশীলতার চর্চা শুরু হওয়া খুবই প্রয়োজন। এ লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে টিম ‘Be Resilient- সহনশীল হই’।”