ল্যাবএইডের হিমঘরে লাশ পচে যাওয়ার অভিযোগ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
সংরক্ষণের জন্য স্বামীর মরদেহ ল্যাবএইড হাসপাতালের হিমঘরে রাখলেও তাদের অবহেলায় তাতে পচন ধরে যায় বলে অভিযোগ করেছেন এক নারী। ঢাকার ধানমণ্ডির বাসিন্দা শিরিন মমতাজ বলছেন, তার স্বামী এ ওয়াই সাহিদুল ইসলামের মরদেহ আনার পর তারা দেখেন, তা পচে-গলে গেছে, মুখমণ্ডলও বিকৃত।
সাহিদুল গত ২৩ জুলাই মারা যাওয়ার পর লাশটি ধানমণ্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের হিমঘরে তিন দিনের জন্য রেখে আসেন শিরিন। তার মেয়ে কানাডা থেকে দেশে ফেরার পর ২৬ জুলাই লাশটি আনতে যান। শিরিন বলেন, হিমঘর (মরচুয়ারি) থেকে লাশ বের করার সময়ই দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল।
আমার স্বামীর লাশ এত বেশি পচে যায় যে জানাজার নামাজের জন্য তা ধানমন্ডি মসজিদের ভেতরে নেওয়া যায়নি। দুর্গন্ধের কারণে নামাজের জন্য আসা মুসলিদের অধিকাংশই জানাজা পড়তে পারেনি। দুর্গন্ধের কারণে লাশ ফ্রিজার ভ্যানের ভেতরে রেখেই রাস্তায় ছোট আকারে জানাজা শেষ করে দাফন সম্পন্ন করতে হয়েছে।
আমার একমাত্র মেয়ে কানাডা থেকে এসেও তার বাবার মুখ শেষবারের মতো দেখতে পারল না। এই ঘটনার জন্য আমি সম্পূর্ণভাবে ল্যাবএইডকে দায়ী করছি, বলেন তিনি। এ বিষয়ে গত ৩১ জুলাই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে গেলে তাও নেওয়া হয়নি বলে জানান শিরিন।
শিরিনের মেয়ে সারজানা ইসলাম বলেন, এমন ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণ হল ল্যাবএইড হাসপাতাল কোনো ধরনের দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করে না। আমাদের সাথে এমন ঘটনা করার পর এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে অতীতেও আরও অনেক অবহেলা ও অস্বচ্ছতার খবর পেয়েছি। এটা আসলে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
শিরিন মমতাজের অভিযোগ শোনার পর শুক্র ও শনিবার ল্যাবএইড হাসপাতালের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ কিছু বলতে চাননি; সবাই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। প্রথমে হাসপাতলের ওয়েবসাইটে দেওয়া জরুরি যোগাযোগ নম্বরে শুক্রবার ফোন করলে ওই প্রান্ত থেকে টেলিফোন অপারেটর পরিচয় দিয়ে ঘটনা জানতে চান। ঘটনা জানানো হলে ওই ব্যক্তি আরেকটি মোবাইল নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।
সেই নম্বরে ফোন করা হলে হাসপাতালের এজিএম (কমিউনিকেশনস) সাইফুর রহমান লেনিনের মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়। লেনিনকে ফোন করে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, এই বিষয় সম্পর্কে আমি কথা বলার ব্যক্তি না। আপনাকে যথাযথ অফিসারের নম্বর দিচ্ছি, উনার সাথে কথা বলেন। তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালের হেড অব অপারেশনস আলমগীরের নাম উলেখ করে তার মোবাইল নম্বর এসএমএস করে পাঠান।
ওই নম্বরে ফোন করলে আলমগীর বলেন, আমি যতটুকু জানি, ওই লোক তার বাসাতে মারা যান। কখন কীভাবে মারা গেছেন, তা আমার জানা নেই। পরে হাসপাতালের মরচুয়ারিতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরে কী হয়েছে, তা আমি আজকে (শুক্রবার) কোনো কথা বলতে পারব না, আগামীকাল ফোন দিন, আমি বিস্তারিত জেনে আপনাকে বলতে পারব।
তার কথা অনুযায়ী শনিবার দুপুরে ফোন করা হলে তা ধরেননি আলমগীর। তিনি হাসপাতালের বায়োমেডিকেল অফিসার ফরিদ নামে একজনের মোবাইল নম্বর এসএমএস করে পাঠিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এরপর ফরিদের নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।