‘লে-অফ’ ঘোষণা করতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের ৬৯ কারখানা
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের মধে চট্টগ্রামের দুটি ইপিজেডের ৬৯টি কারখানা ‘লে অফ’ ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে।
কার্যাদেশ না থাকা, শিপমেন্ট না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে দেশি-বিদেশি এসব কারখানা মালিকরা ‘লে-অফ’র জন্য ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে।
সোমবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম ইপিজেডের ৪৬টি এবং কর্ণফুলী ইপিজেডের ২৩টি কারখানা এই আবেদন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো জানিয়েছে। সে হিসেবে ইপিজেড দুটির প্রায় ৩৫ শতাংশ কারখানা ‘লে অফ’র দিকে যাচ্ছে।
এসবের মধ্যে তৈরি পোশাক ছাড়াও জুতা, তাঁবু, ফেব্রিক্স, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য তৈরির কারখানাও রয়েছে।
বাংলাদেশের শ্রম আইনের ভাষায়, লে-অফ হল কোনো কারখানায় কাঁচামালের স্বল্পতা, মাল জমে যাওয়া কিংবা যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ায় শ্রমিককে কাজ দিতে না পারার অক্ষমতা।
কারখানা কর্তৃপক্ষের লে-অফ ঘোষণার উদ্যোগে উদ্বেগ জানিয়েছেন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে লে অফ ঘোষণা কাম্য নয়। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে লে অফ শ্রমিকদের আরও ‘বেশি ঝুঁকিতে ফেলে দেবে’।
চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী ইপিজেডে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে কারখানা আছে দুইশর মতো। এর মধ্যে কর্ণফুলী ইপিজেডে কারখানা আছে ৪১টি এবং শ্রমিক কাজ করে ৭৬ হাজারের মতো। অপরদিকে চট্টগ্রাম ইপিজেডে কারখানার সংখ্যা ১৫৮টি এবং শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের জিএম খুরশিদ আলম বলেন, তৈরি পোশাক খাত, তাঁবু, জুতা ও ইলেক্ট্রনিক্স কারখানা মিলিয়ে মোট ৪৬টি কারখানা কর্তৃপক্ষ লে অফের জন্য তাদের কাছে অনুমোদন চেয়েছে।
তিনি বলেন, কাজ না থাকা, বিদেশি ক্রেতাদের শিপমেন্ট বাতিল করা, কাজের আদেশের অনিশ্চয়তা সব মিলিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ লে অফের আবেদন করছে। নিজেদের টিকে থাকতে কারখানা কর্তৃপক্ষ চাইলে লে অফ ঘোষণা করতে পারে। সে হিসেবে তারা আইন মেনেই আবেদন করেছে।
কর্ণফুলী ইপিজেডের জিএম মশিউদ্দিন বিন মেজবাহ জানান, গত ৫ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষ লে অফের জন্য আবেদন করেছে। তাদের ইপিজেডে মোট ২৩টি কারখানা বিভিন্ন মেয়াদে লে অফের জন্য আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে বেপজার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, বিভিন্ন কারখানা বন্ধ, কাঁচামাল নেই, কার্যাদেশ বাতিল হয়েছে। সব মিলিয়ে তারা বিভিন্ন মেয়াদে লে অফে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শ্রমিকদের কারখানায় এনে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে ফেলার চেয়ে কর্তৃপক্ষ লে অফ ঘোষণা করলে ঝুঁকি অনেক কমে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কারখানাগুলো লে অফে গেলেও নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ করতে হবে।”
শ্রম আইন অনুযায়ী, লে-অফ চলাকালে প্রথম ৪৫ দিনের ক্ষেত্রে পূর্ণকালীন শ্রমিকের মোট মূল মজুরি, মহার্ঘ ভাতার অর্ধেক দিতে হয় মালিককে। পরের ১৫ দিনের জন্য শ্রমিক পাবে পাবে ২৫ শতাংশ মূল বেতন এবং বাড়ি ভাড়া।
লে-অফ ঘোষণায় আপত্তি জানিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির চট্টগ্রাম জেলা আহ্বায়ক হাসান মারুফ রুমি বলেন, সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে লে অফ ঘোষণা করে শ্রমিকদের ‘আরও ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে’।
কয়েক দিন পর রোজা আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এরপরে আসবে ঈদ। এ সময়ে লে অফে যাওয়া মানে শ্রমিকদের অমানবিক জীবনযাপনের দিকে ঠেলে দেওয়া। শ্রমিকরা সামনে চলবে কীভাবে?”