লেকহেড স্কুলের সাবেক শিক্ষকসহ ২ জন রিমান্ডে
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকসহ এক শিক্ষক গ্রেপ্তারের ঘটনায় আলোচনায় ফিরে এল কয়েক বছর আগে জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা ও ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ঢাকার গ্রেপ্তার ইয়াছিন মোহাম্মদ আ. সামাদ তালুকদার (৩৭) বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক এবং তেহজীব করিম লেকহেড গ্রামার স্কুলের সাবেক শিক্ষক।
গত ১৭ মে ভোরে বনানী গাউসুল আযম মসজিদের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সাঈদ। তারা জঙ্গি সংগঠনকে সক্রিয় করার প্রক্রিয়ায় ছিলেন অভিযোগ করে দুজনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলা করে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম গ্রেপ্তারের দিনই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন। ২৩ মে ওই আবেদনের শুনানির দিন ঠিক হলেও মূল নথি না থাকায় তা হয়নি।
রোববার শুনানিতে তেহজীবের পক্ষে তার আইনজীবী শারমিন সুলতানা হ্যাপি জামিনের আবেদন করেন। ইয়াছিনের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী মেরিনা আক্তার। অন্যদিকে তেহজীবকে হেফাজতে চেয়ে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে বলা হয়, তিনি জামাতুল মুসলিমিনের (জেএম) সক্রিয় সদস্য।
২০১০ সালে তিনি ইয়েমেনের জঙ্গিনেতা আনওয়ার আল আওলাকির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি ১০ মাস কারাভোগ করেন। তেহজীব করিমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তার বড় ভাই আল কায়েদা মতাদর্শী রাজিব করিম ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এ অভিযোগে ৩০ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে লন্ডনের জেলে আছেন।
আসামি ইয়াছিনের হেফাজতের আবেদনে বলা হয়, তিনি আনসারুলাহ বাংলা টিমের আমির মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। তিনি জসীম উদ্দিন রাহমানীর হাতেমবাগ মসজিদে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। জসীম উদ্দিন রাহমানী তাকে বিভিন্ন জেহাদি লেকচারের ভিডিও এডিটিং করে বিভিন্ন অনলাইন গ্র“পে পোস্ট করার নির্দেশ দিতেন। জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণের মূল পরিকল্পনাকারী এ মামলায় গ্রেপ্তার রিজওয়ান হারুনের সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
ইয়াছিন মোহাম্মদ ও তেহজীব করিমের প্রত্যক্ষ মদদে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম আল কায়েদার মতাদর্শী জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুসলিমিন প্রতিষ্ঠিত হয় বলে দাবি করেছে পুলিশ। সংগঠনটি পুলিশের ‘কালো তালিকা’য় রয়েছে।
রিমান্ড আবেদন অনুযায়ী, এ দুই আসামিসহ জঙ্গি সংগঠনের অন্য সদস্যরা ঢাকা শহরে বিভিন্ন বাসা, মসজিদ এবং হারুন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নিজস্ব অফিস (নর্থ সাউথ ইউনিভাসিটি সংলগ্ন) ‘দাওয়া হালাকা’ কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করতেন।
ওই হালাকায় বয়ান করা হতো যে, প্রচলিত ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করা যাবে না। যারা জামাতুল মুসলিমিনের বায়াত গ্রহণ করবে না তারা সবাই কাফির। সংগঠনের সকল সদস্য হিজরত করবে। বাংলাদেশের প্রচলিত ঈদের নামাজের পরিবর্তে ইউনিফাইড মুন সাইটিং কমিটির নির্দেশনায় ঈদের আগে সপরিবারে নামাজ আদায় করবে।
২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি ডিবি পুলিশের এসআই মনিরুল ইসলাম মৃধার দায়ের করা মামলায় লেকহেড গ্রামার স্কুলের রিজওয়ান হারুন, এমডি খালেদ হাসান মতিনসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে স্কুলে শিক্ষা প্রদানের আড়ালে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সমর্থন, সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন ও সন্ত্রাসী কাজ সংগঠনে সাহায্য ও সহায়তার অভিযোগ করা হয়।
ধানমণ্ডি ও গুলশানে স্থাপিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সরকারি অনুমোদন না থাকাসহ জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা, ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগে ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকায় লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেয়। পরে ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ইলিয়াস মেহেদী ওই স্কুলে গিয়ে সিলগালা করে দেন।
এ বছর জানুয়ারিতে জঙ্গিবাদ প্রচারের অভিযোগে ঢাকার গুলশান এলাকার লেকহেড গ্রামার স্কুলের আগের মালিক রিজওয়ান হারুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।