January 21, 2025
আন্তর্জাতিক

লিবিয়ায় বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশি যে লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন

লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের এলোপাতাড়ি গুলিতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১১ জন গুরুতর আহত হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন একজন। তিনিই দূতাবাসকে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন। তার নাম-পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে নিরাপত্তার স্বার্থে। তবে তিনি সম্পূর্ণ অক্ষত ও বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ত্রিপলীস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।

তার বয়ান মতে, লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিজ্দাহতে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থলের অবস্থান ত্রিপলী শহর থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে। প্রায় ১৫ দিন আগে বেনগাজী থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে কাজের সন্ধানে তারা যাচ্ছিলেন। এমন সময় মানবপাচারকারীরা তাদের জিম্মি করে।

তারা মোট ৩৮ জনের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য একত্র জড়ো করে। তাদের রাজধানী ত্রিপলীতে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মিজ্দাহ শহরে নেওয়ার পর তাদের ওপর শুরু করে বর্বর নির্যাতন। উদ্দেশ্য দ্রুত মুক্তিপণ আদায়। অত্যাচার-নির্যাতনের চরম পর্যায়ে সূযোগ বুঝে প্রতিরোধ গড়ে তোলো ভিকটিমরা। তারা মূল হোতা লিবিয়ান ব্যক্তির ওপর চড়াও হলে তার মৃত্যু ঘটে। কিন্তু ঘটনাটি তখনই তাদের আয়ত্তের বাইরে চলে যায় এবং বড় বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। মুহূর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে যায় ওই নিহত পাচারকারীর স্বজনদের কাছে। তারাসহ অন্য দুষ্কৃতিকারীরা আকষ্মিকভাবে জিম্মিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি করলে অন্তত ২৬ জন বাংলাদেশি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

ওই বাংলাদেশিসহ স্থানীয় সূত্রের বরাতে ত্রিপলীস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বৃহস্পতিবার (২৮ মে) রাতে ঢাকায় একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছে। তাতেও প্রায় অভিন্ন বর্ণনা রয়েছে।

ই-মেইলযোগে পাঠানো বাংলাদেশ দূতাবাস ত্রিপলী, লিবিয়ার রিপোর্ট মতে, দূতাবাস বৃহস্পতিবার লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিজ্দাহতে কমপক্ষে ২৬ জন বাংলাদেশিকে লিবিয়ান মিলিশিয়া গুলি করে হত্যা করার তথ্য পায়।

তাৎক্ষণিকভাবে দূতাবাস অনুসন্ধানে নামে। নিশ্চিত হন যে লিবিয়ার মিলিশিয়া বাহিনী বাংলাদেশিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালালে প্রায় সবাই হতাহত হন। তবে একজন প্রাণে বেঁচে যান। তার সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের টেলিফোন যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়। তিনি বর্তমানে একজন হৃদয়বান লিবিয়ানের আশ্রয়ে আত্মগোপন করে আছেন। দূতাবাস ঢাকাকে জানায়, নিহত ২৬ বাংলাদেশির মরদেহ মিজদাহ হাসপাতালে সংরক্ষিত রয়েছে। অবশিষ্ট ১১ বাংলাদেশিরা হাতে-পায়ে, বুকে-পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে মিজদাহ হাসপাতালের পরিচালক টেলিফোনে এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানান যে, ওই মরদেহসমূহ বর্তমানে মিজদাহ হাসপাতাল মর্গে পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং ওই মরদেহসমূহের বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। দূতাবাস ঢাকাকে এটা নিশ্চিত করেছে যে, আহত ১১ বাংলাদেশিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ত্রিপলী মেডিক্যাল সেন্টারে (টিএমসি) পাঠানোর ব্যবস্থা এরইমধ্যে নেওয়া হয়েছে।

ত্রিপলী মেডিক্যাল সেন্টারে পৌঁছার পর দূতাবাস থেকে আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঘটনার বিশদ বিবরণ নেওয়াসহ নিহতদের পরিচয় উদঘাটনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে দূতাবাস থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২০

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *