লাদাখে হাতাহাতির পর ভারতীয় টহলদলকে ‘আটক করেছিল চীন’
লাদাখে দুইপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির পর চীন ভারতীয় একটি টহলদলের সদস্যদের কিছু সময় আটকে রেখে পরে ছেড়ে দিয়েছিল বলে এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলকে (এলএসি) ঘিরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে গত সপ্তাহে এ ঘটনা ঘটেছিল; পরে উভয়পক্ষের সেনা কমান্ডারদের সীমান্ত বৈঠকের পর উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হয় বলে বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ভারতীয় এ গণমাধ্যমটি।
ভারতীয় সেনাবাহিনী প্যাংগং হ্রদের কাছে হওয়া এ ঘটনার বিস্তারিত দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করেছে।
“বুধবার ভারতীয় ও চীনা সেনাদের মধ্যে হাতাহাতির পর আমাদের কিছু সেনাকে আটক করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল; পরে অবশ্য ওই সেনাদের ছেড়ে দেয়া হয়,” এনডিটিভিকে এমনটাই বলেছেন ঊর্ধ্বতন এক সরকারি কর্মকর্তা।
হাতাহাতির পর চীন ভারতীয় সেনাদের অস্ত্রশস্ত্রও ছিনিয়ে নেয়।
“ঘটনাক্রমে পরে সেসব অস্ত্রও ফিরিয়ে দেয় তারা। আমাদের সেনারাও ফিরে এসেছে,” বলেছেন তিনি।
ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এমনটা বললেও ভারতীয় সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের হাতে তাদের কোনো সদস্যের আটক হওয়ার খবর অস্বীকার করেছে।
“চীন সীমান্তে কোনো ভারতীয় সৈন্য আটক হননি। আমরা সুনিশ্চিতভাবেই এ ধরনের খবর অস্বীকার করছি। গণমাধ্যমের এ ধরনের অবান্তর খবর প্রকাশ জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে,” ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল আমান আনন্দ এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএনআই।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সেনাবাহিনীর পাঠানো তথ্যে চীনের সৈন্যরা ভারতীয় ভূখণ্ডের অনেকখানি ভেতরে চলে এসেছিল এবং প্যাংগং হ্রদে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আগ্রাসী টহল পরিচালনা করেছিল বলে জানানো হয়েছে।
“বড় ধরনের শক্তি সমাবেশই করেছিল তারা, পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হয়ে এলেও এখনও শেষ হয়নি,” বলেছেন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
উপগ্রহের ছবিতেও লাদাখে মোতায়েন করা চীনা সৈন্য, তাদের তাঁবু ও সরঞ্জামাদি দেখা গেছে বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ভারতীয় ওই কর্মকর্তা বলেছেন, লাদাখের গালওয়ান নদীসংলগ্ন তিনটি অংশে চীনের তাঁবু নির্মাণের বিষয়টি জানতে পেরেছেন তারা। ওই এলাকায় এখন দুই পক্ষের শক্তি সামর্থ্য সমান বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
লাদাখের উত্তর অংশ দিয়ে গালওয়ান নদী প্রবাহিত হচ্ছে।
পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিনই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে অবহিত করা হচ্ছে বলেও বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
পর্যালোচনার পর লাদাখে শক্তি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে গালওয়ান অঞ্চলে আরও সেনা মোতায়েন হয়, বলেছে তারা।
সূত্রগুলো গত এক সপ্তাহ ধরে চীন ও ভারত ওই অঞ্চলে সৈন্য সংখ্যা বাড়াচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে।
লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলকে (এলএসি) ঘিরে চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় শুক্রবার ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে লাদাখ সফর করেছেন।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর পাঠানো তথ্যে চলতি মাসের শুরুতে লাদাখের পূর্বাঞ্চলের বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে চীনের হেলিকপ্টার দেখা গেছে বলে জানানো হয়েছে।
এনডিটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের এয়ার চিফ মার্শাল আরকেএস ভাদুরিয়াও সম্প্রতি লাদাখে চীনা হেলিকপ্টারকে উঁকিঝুঁকি দিতে দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন।
গালওয়ান অঞ্চলে ভারতের সড়ক ও সেতু বানানো নিয়ে চীনের ধারাবাহিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে ওই অঞ্চলে দুইপক্ষের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়।
নিজেদের সীমানার ভেতর ওই সড়ক স্থানীয় জনগণের জন্য বানানো হয়েছে বলে দাবি নয়া দিল্লির। অন্যদিকে চীনের গণমাধ্যমগুলো সীমান্তে উসকানির জন্য ভারতকে দায়ী করে আসছে।