লাইফ সাপোর্টে থাকা নাসিমকে ‘সিঙ্গাপুরে নিতে চায়’ পরিবার
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর চেষ্টা করছে তার পরিবার।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বুধবার বলেন, “নাসিম ভাইয়ের ছেলে তানভীর শাকিল জয় আমাকে সকালে জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজেবেথ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সেখানে কাগজপত্র পঠানো হয়েছে। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হচ্ছে।”
তবে এই অবস্থায় নাসিমকে বিদেশে নেওয়া যাবে কি না- তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তার চিকিৎসায় গঠিত ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বুধবার বলেন, “উনার অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন, অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসিম গত আট দিন ধরে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় গত শুক্রবার সকালে তার ‘ব্রেইন স্ট্রোক’ হলে সেখানেই তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়।
অস্ত্রোপচারের পর নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা নাসিমের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে গেলে ১৩ সদস্যের এই মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। নাসিমকে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে।
এর মধ্যে মঙ্গলবার সকালে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রটোকল অনুযায়ী কারও কোভিড-১৯ ধরা পড়লে উপসর্গ কমে আসার পর আবারও তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এভাবে পর পর দুটি পরীক্ষার ফল ‘নেগেটিভ’ এলে ধরে নেওয়া হয়, তার শরীরে আর ভাইরাসের সংক্রমণ নেই।
সোমবার রাতে শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেছিলেন দ্বিতীয় পরীক্ষার রেজাল্ট ‘নেগেটিভ’ এলে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে নাসিমকে।
জ্বর ও কাশির মত উপসর্গ নিয়ে গত ১ জুন শ্যামলীর ওই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পরীক্ষায় মোহাম্মদ নাসিমের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার স্ত্রী এবং বাসার একজন গৃহকর্মীও কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানিয়েছিলেন।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম পঞ্চমবারের মত সংসদে সিরাজগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। পরের বছর মার্চে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তাকে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নাসিম এক সঙ্গে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদলে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও সেবার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি নাসিমের। তবে পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা।
নাসিমের সময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা জাহিদ মালেক এই সরকারে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন।
এখন মন্ত্রিসভায় না থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন নাসিম।