লকডাউন কতদিন, সে পরামর্শ দেবে টেকনিক্যাল কমিটি
দেশব্যাপী চলমান লকডাউন খোলার ব্যাপারে ১৭ সদস্যের বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত করোনা টেকনিক্যাল কমিটি সরকারকে পরামর্শ দেবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি জানান, একই সঙ্গে ঈদে শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ রাখা হবে কিনা সে ব্যাপারেও কমিটি সরকারকে পরমার্শ দেবে। দেশের এই উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে সরকার।
মঙ্গলবার (৫ মে) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনা টেকনিক্যাল কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
কমিটির সদস্যরা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে টেস্টিং সুবিধা বাড়ানো, চিকিৎসকদের পিপিই ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা, দেশের মা ও শিশুদের চন্য আলাদা চিকিৎসাসেবা রাখা, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মন্ত্রণালয় থেকে সমন্বয় বাড়ানোসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান।
সভায় টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি নন-কোভিট রোগীদের যাতে ভোগান্তি না হয় সে ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। নন-কোভিট হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, টেস্টিংয়ে বেশি সময় নষ্ট না করা, প্রথম টেস্টিংয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির নেগেটিভ ফলাফল এলে তাকে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করতে সময়ক্ষেপণ হয় এবং বেড অকুপেশন থাকে বলেও জানায় টেকনিক্যাল কমিটি।
সিনিয়র শিশু বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে সভাপতি ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাকে সদস্য সচিব করে গত ১৮ এপ্রিল ১৭ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়।
জাহিদ মালেক বলেন, লকডাউন তুলে দেওয়া ও দোকানপাট খোলার বিষয়ে টেকনিক্যাল কমিটি যে সুচিন্তিত পরামর্শ দেবেন সেগুলো আমরা গ্রহণ করে যথাযথ জায়গায় পৌঁছে দেবো। তারপরে সরকারের যে নির্দেশনা থাকবে সে অনুযায়ী কাজ করবো। ঈদের ছুটিতে মানুষের যাওয়ার বিষয়েও মতামত দেবেন তারা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কমিটির অবজারভেশন ছিল যে কোনো রোগী যাতে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে না দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আমরা আরো বেশি করে গুরুত্ব সহকারে দেখবো।
এখন করোনা টেস্ট বেশি হচ্ছে, ল্যাব ৩৩টি হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ওনাদের পরামর্শ হলো রিপোর্ট আরো বাড়াতে হবে, টেস্টের ফল দেওয়ার সময় কমাতে হবে। আমরা এ বিষয়ে আরো জোরালো পদক্ষেপ নেবো।
টেকনিক্যাল কমিটি একটি সাব-কমিটি গঠনের কথা বলেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের লোকবল নিয়ে কমিটি হবে। এই কমিটি টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ বাস্তবায়ন করবে।
মন্ত্রী বলেন, ডাক্তারদের সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে, কী কারণে বেড়ে যাচ্ছে এ বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে পিপিই ব্যবহারের বিষয়ে বেশি নজর দিতে বলা হয়েছে। খোলা ও পরার সময়ে বেশি সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।
তারা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে টেস্টিং ক্যাপাসিটি আরো বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন, এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নেবো যাতে টেস্ট আরো বাড়ে; বলেন মন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর স্বল্পতা আছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, এ বিষয়েও যাতে বেশি করে নেওয়া যায়। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে এ কাজটি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।
‘পরিবার পরিকল্পনায় যাতে অবহেলা না হয়। কোভিড-১৯ রোগীর পাশাপাশি মা ও শিশু এবং অন্য রোগীদের চিকিৎসাও বজায় রাখতে হবে সর্বপর্যায়ে। এ বিষয়ও উঠে এসেছে।’
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর সেবা দেওয়ার সরকারি ও বেসিরকারি হাসপাতালের মধ্যে একটা নেটওয়ার্কিং করার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে কোনো হাসপাতালে সমস্যা থাকলে সমাধান দিতে পারবো।
‘তারা বলেছেন ডাক্তার-নার্স এবং অন্য যারা কাজ করছেন তাদের আরো উৎসাহিত করতে হবে। সমস্যা দূর করতে হবে যাতে আরো ভালো করে কোভিড-১৯ সেবা দিতে পারেন।’
সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।