লকডাউনে’ কর্মহীনদের তালিকা হচ্ছে
ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের তালিকা করতে যাচ্ছে সরকার।
আপাতত খসড়া তালিকা করা হচ্ছে জানিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব কে এম আলী আজম বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বন্ধের মধ্যে কত মানুষ কর্মহীন হয়েছেন দুই-তিন দিন পর সেই ধারণা দেওয়া যাবে।
“আমাদের যেসব সোর্স আছে, সেসবের মাধ্যমে আমরা এই তালিকা করছি। দুই-তিন পর একটা রাফ ধারণা দিতে পারব।”
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে অফিস-আদালত বন্ধ। সারা দেশে গণপরিবহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার আগে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে।
এই সময় সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়ায় বিশ্বের আরও অনেক দেশের মত বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষও ঘরবন্দি দশার মধ্যে পড়েছেন, যাকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বর্ণনা করা হচ্ছে ‘লকডাউন’ হিসেবে।
এই লকডাউনের মধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষ। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেও কাজ হারিয়েছেন অনেকে।
শ্রম সচিব আলী আজম বলেন, এই পরিস্থিতি যত দীর্ঘ হবে, কর্মহীন মানুষের সংখ্যাও তত বাড়বে।
“তবু আমরা দুই-তিন দিন পর কাছাকাছি একটা ফিগার দিতে পারব। ফরমাল সেক্টরের পাশাপাশি ইনফরমাল সেক্টরে যারা বেকরা হয়েছেন সেই তালিকাও করা হবে।”
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে মিলে কর্মহীনদের তালিকা করা হচ্ছে জানিয়ে শ্রম সচিব বলেন, “আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকেও তথ্য নেব।”
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সব মিলিয়ে সাড়ে ছয় কোটি মানুষ কাজে নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে এক কোটি এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ কাজ করেন বলে জানান সচিব আলী আজম।
“প্রকৃতপক্ষে কত সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়েছেন সেই তালিকা ফরমালওয়েতে করা হবে আরও কিছুদিন পর। কারণ এটা পরিবর্তনশীল অবস্থা, সে বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে।”
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, “এই মহামারীর মধ্যে ফরমাল সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য কী করতে হবে প্রধানমন্ত্রী সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। ইনফারমাল সেক্টরের বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকদের জন্য কী করা যায় তা নিয়ে আমরা ভাবছি।
“শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তবহিল থেকে সব ধরনের শ্রমিকদের সহায়তা করা গেলেও কিছু রুলস মেইনন্টেন করতে হয়। এখন এই বিশেষ পরিস্থিতিতে কী করা যায় আমরা দেখছি।”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল জানান, সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে ত্রাণ হিসেবে বিতরণের জন্য ৭৫ হাজার ৯৬৭ মেট্রিক টন চাল এবং ৩০ কোটি এক লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এর বাইরে শিশুখাদ্য কিনতে আরও চার কোটি ৭৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
শাহ কামাল বলেন, “আমাদের উপকারভোগী জনসংখ্যা দুই কোটি ৭৭ লাখ ২০ হাজার ৪৮৪ জন। আমরা ৮৬ হাজার ২৪৮ জন শিশুকেও কভার করছি, এটা দিন দিন বাড়ছে।”
করোনাভাইরাসের অভিঘাতে অর্থনীতির ক্ষতির মধ্যেও কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গ্রামের ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া শিল্প এবং ব্যবসা বাণিজ্য যাতে অব্যাহত থাকতে পারে সেজন্য প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন সরকারপ্রধান।