রোহিত-রাহুল-কুলদীপের কীর্তি রাঙা জয় ভারতের
আরও একবার সামর্থ্য দেখাল ভারতের ব্যাটিং ইউনিট। নিজের রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করে রোহিত শর্মা উপহার দিলেন দেড়শ ছাড়ানো আরেকটি ইনিংস। ফর্মে থাকা লোকেশ রাহুলের ব্যাটে এলো পরিশীলিত সেঞ্চুরি। তাতে যে উচ্চতায় উঠল ভারতের রান, সেটিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইতিহাস গড়া হ্যাটট্রিকে দলের জয়ে নিজের ছাপ রাখলেন কুলদীপ যাদব।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বিশাখাপত্নমে বুধবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০৭ রানে হারিয়েছে ভারত। সমতা ফিরিয়েছে তিন ম্যাচ সিরিজে।
আগের ম্যাচে ২৮৭ রান করে হেরেছিল ভারত। এবার দলকে আরও ১০০ রান বেশি এনে দিলেন ব্যাটসম্যানরা। ৩৮৮ রান তাড়ায় ক্যারিবিয়ানরা অলআউট হয়েছে ২৮০ রানে।
টস জিতে বোলিংয়ে নামা ক্যারিবিয়ানদের প্রথম উইকেটের দেখা পেতেই লেগে যায় ৩৭ ওভার। রোহিত ও রাহুল গড়েন ২২৭ রানের জুটি।
১৩৮ বলে ১৫৯ রানের ইনিংস খেলেন রোহিত। ওয়ানডেতে অষ্টম দেড়শ ছোঁয়া ইনিংসে নিজের রেকর্ড সংহত করেছেন আরও। রাহুল করেন তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। শেষ দিকে তাণ্ডব চালান রিশাভ পান্ত ও শ্রেয়াস আইয়ার।
ছবি: বিসিসিআই
বিশাখাপত্নমের এই মাঠেই গত বছর এই দুই দলের ম্যাচ টাই হয়েছিল ৩২১ রান তুলে। এবার তাই ভারতের তাড়না ছিল আরও বড় স্কোরের। সেই ভিত গড়ে দেন দুই ওপেনার।শুরুতে খুব বিধ্বংসী ছিল না দুজনের কারও ব্যাটিং। তবে বলপ্রতি রান নিয়ে অনায়াসে এগিয়ে যান দুজনই। ৪৬ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন রাহুল, ৬৭ বলে রোহিত।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে রানের গতি। রাহুলকে পেছনে ফেলে রোহিত সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান আগে। ১০৭ বলে ছুঁয়ে ফেলেন তিন অঙ্ক।
২৮ ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে রোহিত এখন সনাৎ জয়াসুরিয়ার পাশে। তার ওপরে কেবল রিকি পন্টিং (২৮), বিরাট কোহলি (৪৩) ও শচিন টেন্ডুলকার (৪৯)।
রাহুলের সেঞ্চুরি আসে ১০২ বলে। সেঞ্চুরির পরপরই আউট হয়ে যান তিনি আলজারি জোসেফের বলে।
বিরাট কোহলির জন্য মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। তবে দীর্ঘসময় ড্রেসিং রুমে অপেক্ষায় থাকার পর ভারতীয় অধিনায়ক নেমে আউট হয়ে যান প্রথম বলেই।
ভারতের দ্রুত রান তোলায় তাতে সমস্যা হয়নি। বরাবরের মতোই সেঞ্চুরির পর আরও আগ্রাসী হন রোহিত। ১৩২ বলে স্পর্শ করেন দেড়শ।
এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, তার ব্যাটে আরও একটি ডাবল সেঞ্চুরি কেবল সময়ের ব্যাপার। তবে হয়নি এবার। ১৭ চার ও ৫ ছক্কার ইনিংস শেষ হয় শেলডন কটরেলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে।
ক্যারিবীয় বোলারদের যন্ত্রণা বাকি ছিল এরপরও। খুনে ব্যাটিংয়ে ২৫ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়েন শ্রেয়াস ও পান্ত।
জোসেফকে দুটি ছক্কা মারার পর কটরেলের এক ওভারে পান্ত মারেন দুই ছক্কা ও তিন চার। পরের ওভারে রোস্টন চেইসের বলে শ্রেয়াস মারেন চার ছক্কা, এক চার।
১৬ বলে ৩৯ করে আউট হন পান্ত। শ্রেয়াস অপরাজিত থেকে যান ৩২ বলে ৫৩ করে। ১১ ওয়ানডেতে এটি তার ষষ্ঠ ফিফটি।
শেষ ১০ ওভারে ভারত তোলে ১২৭ রান।
৩৮৮ তাড়া করতে প্রয়োজন ছিল উড়ন্ত সূচনা। ক্যারিবিয়ানদের শুরু পরিস্থিতির বিচারে ছিল যেন ঘুমন্ত। এভিন লুইস ও শেই হোপ ৬১ রানের জুটি গড়েন বটে, তবে লেগে যায় ১১ ওভার!
এরপর সেভাবে আর জয়ের সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি তারা। ৩৫ বলে ৩০ করে আউট হন লুইস। শিমরন হেটমায়ার রান আউট হন শ্রেয়াসের অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে। অল্পতে ফেরেন রোস্টন চেইসও।মিডল অর্ডারে নিকোলাস পুরান দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে চেষ্টা করেন ম্যাচে প্রাণ ফেরাতে। ৬টি করে চার ও ছক্কায় এই বাঁহাতি করেছেন ৪৭ বলে ৭৫। কিন্তু কাইরন পোলার্ড প্রথম বলে আউট হওয়ার পরই শেষ হয়ে যায় যাবতীয় উত্তেজনা।
কোহলির পর পোলার্ডও প্রথম বলে আউট, ওয়ানডে ইতিহাসে এই প্রথম এক ম্যাচে ‘গোল্ডেন ডাক’ পেলেন দুই অধিনায়ক।
হোপ টিকে ছিলেন তখনও। ৮৫ বলে ৭৮ রান করা ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েই রেকর্ডের পথে কুলদীপের এগিয়ে চলা। পরের দুই বলে এই চায়নাম্যান বোলার বিদায় করেন জেসন হোল্ডার ও আলজারি জোসেফকে। মেতে ওঠেন হ্যাটট্রিকের উচ্ছ্বাসে।
প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একাধিক হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেলেন কুলদীপ। ২০১৭ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ওয়ানডে ম্যাচেই।
শেষ দিকে কিমো পল ৪২ বলে ৪৬ ও অভিষিক্ত ক্যারি পিয়ের ১৮ বলে ২১ করে কিছুটা কমিয়েছেন ব্যবধান। তারপরও ভারত জিতেছে বড় ব্যবধানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ৩৮৭/৫ (রোহিত ১৫৯, রাহুল ১০২, কোহলি ০, শ্রেয়াস ৫৩, পান্ত ৩৯, কেদার ১৬*, জাদেজা ০*; কটরেল ৯-০-৮৩-২, হোল্ডার ৯-০-৪৫-০, পিয়ের ৯-০-৬২-০, পল ৭-০-৫৭-১, জোসেফ ৯-১-৬৮-১, চেইস ৫-০-৪৮-০, পোলার্ড ২-০-২০-১)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৩.৩ ওভারে ২৮০ (লুইস ৩০, হোপ ৭৮, হেটমায়ার ৪, চেইস ৪, পুরান ৭৫, পোলার্ড ০, হোল্ডার ১১, পল ৪৬, জোসেফ ০, পিয়ের ২১, কটরেল ০*; চাহার ৭-১-৪৪-০, শার্দুল ৮-০-৫৫-১, শামি ৭.৩-০-৩৯-৩, জাদেজা ১০-০-৭৪-২, কুলদীপ ১০-০-৫২-৩, ১-০-১৩-০)।
ফল: ভারত ১০৭ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: রোহিত শর্মা