রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ৪১ এনজিও প্রত্যাহার
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
নানা ‘অপকর্মে জড়িত থাকায়’ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত প্রায় অর্ধশত বেসরকারি সংস্থাকে (এনজিও) ওই এলাকায় কাজ থেকে প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
গতকাল শনিবার তিনি সিলেটে এক অনুষ্ঠানে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা তৈরির পর ১৩৯টি এনজিও ওই এলাকায় তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিল। এদের মধ্যে নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকায় তালিকা করে ৪১টি এনজিওকে সে এলাকা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আরও অনেক এনজিও এখনও একই কাজ করছে উলেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এদের কার্যক্রমে নজরদারী হচ্ছে। তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশি-বিদেশি এসব এনজিওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে বিদেশ থেকে তদবীর করা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর দ্বিতীয় প্রচেষ্টা ভেস্তে যাওয়া, কক্সবাজারের উখিয়ায় একটি দোকানে ধারালো অস্ত্র পাওয়া এবং মুক্তি কক্সবাজার নামের একটি এনজিওর কয়েকটি প্রকল্পের কাজ স্থগিত করার মধ্যে মন্ত্রী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এর একদিন আগে মন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
সকালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের গোটাটিকর এলাকায় স্থাপিত ডাম্পিং গ্রাউন্ডের পাশে স্থাপিত মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের উদ্বোধন শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
অনুষ্ঠনে অন্যান্যের মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, আজম খান, অ্যাডভোকেট ছালেহ আহমদ সেলিম, প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম সুমন, নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর, রুহুল আলম, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আ ন ম মনসুফ সহ সিসিকের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। দুই বছরে এই সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়েছে। তাদের আশ্রয় দেওয়া হয় কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে; সেখানে আগে আসা আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।
গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর দ্বিতীয় প্রচেষ্টা ভেস্তে যাওয়ার পর বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। ওই বৈঠকে তিনি মিয়ানমার যাতে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য হয় সেজন্য আরও উদ্যোগী হতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতি আহŸান জানান।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের দ্বিতীয় বছর র্পূর্তিতে গত রোববার শরণার্থী শিবিরে বিশাল সমাবেশ করে মিয়ানমারের এই নাগরিকরা। রোহিঙ্গাদের ওই সমাবেশে তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখা যায়। ওই সময়ে কক্সবাজারের উখিয়ার কোটবাজার এলাকায় একটি কামারের দোকান থেকে লোহার তৈরি ধারালো প্রায় সাড়ে ছয়শ’ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে দেশি-বিদেশি নানা এনজিও কাজ করে আসছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর পর নানা অভিযোগে এর আগে ছয়টি এনজিওর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো হলো ইসলামিক রিলিফ, ইসলামিক এইড, মুসলিম এইড, স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি ও নমিজান আফতাবি ফাউন্ডেশন। সর্বশেষ উখিয়ায় একটি কামারের দোকান থেকে ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের পর ‘মুক্তি কক্সবজার’ নামের এনজিওর ছয়টি প্রকল্প সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে সরকার।