রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সাড়া মেলেনি মিয়ানমার প্রতিনিধিদের
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
কক্সবাজারে যাওয়া মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পরও প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো হদিস না পেয়ে বরাবরের মতোই হতাশ হয়ে বৈঠক থেকে বের হয়েছে রোহিঙ্গারা।
এছাড়া রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্বসহ অতীতের দাবি দাওয়ায় সঙ্গে নতুন করে সংলাপের শর্ত জুড়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বৈঠকে থাকা রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ।
গতকাল শনিবার সকালে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মেন্ট থোয়ের নেতৃত্বে ঢাকায় আসা একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের কুতুপালং লম্বাসিয়া ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দীর্ঘ তিন ঘণ্টা বৈঠক করে। বৈঠকে ৩৫ জন রোহিঙ্গা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বৈঠকে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালামসহ পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজারে পৌঁছে প্রতিনিধি দলটি।
রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আমাদের আবার পুরানো কথাগুলো বলেছেন। আমাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) নিতে বলছেন। আরও বলেছেন, মিয়ানমারে ফিরে না গেলে নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে না। কিন্তু আমরা বলেছি, আমরা এনভিসি কার্ড নেবো না। নাগরিকত্ব দিতে হলে আমাদের যেসব রোহিঙ্গা আইডিপি ক্যাম্পে আছেন, তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে দেখান।
দিল মোহাম্মদ আরও বলেন, মিয়ানমারকে আমরা বিশ্বাস করি না। তাই তাদের আমরা বলেছি, প্রত্যাবাসনের আগে তাদের সঙ্গে আমাদের সংলাপে বসতে হবে। তারা আমাদের বলেছেন, সরকারের সঙ্গে আলাপ করে সংলাপের বিষয়ে তাদের সিদ্বান্তের কথা জানাবেন।
বৈঠকে থাকা আরেক রোহিঙ্গা নেতা আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সেক্রটারি সৈয়দ উলাহ বলেন, তিন ঘণ্টার বৈঠকে যা যা আলাপ হয়েছে, সব পুরানো বিষয় ছিল। তাই এ আলোচনায় কোনো সিদ্বান্ত আসেনি। বরং আমরা যে তাদের সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছি, সে বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাবো কি-না, তা নিয়েও আমরা সন্দিহান।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে বোঝানোর জন্য দুইদিনের সফরে আসিয়ানের (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের আঞ্চলিক জোট) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মানবিক সহায়তা কেন্দ্র বা আহা সেন্টার ও মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল একসঙ্গে বাংলাদেশে আসে। রোববারও (২৮ জুলাই) রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা রয়েছে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটির।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়ানক নির্যাতনের মুখে পড়ে রাখাইন থেকে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ পাহাড়ের ৩৪টি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।