November 30, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

রোজিনা ইসলামের ব্যাগে থাকা সেই চিঠিতে যা ছিল

চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে করোনা ভাইরাসের টিকা উৎপাদনের জন্য চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। এই দু’টি দেশে উদ্ভাবিত করোনার টিকা বাংলাদেশের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির মাধ্যমে দেশেই উৎপাদনে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটি।

সম্প্রতি মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। যেসব কোম্পানির সঙ্গে ওই দু’টি দেশের চুক্তি হবে তারা টিকা উৎপাদন শুরু করবে। বৈঠকে রাশিয়া ও চীনের দু’টি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির টিকা উৎপাদনের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে কোন কোন ওষুধ কোম্পানির মাধ্যমে এ টিকা উৎপাদন হবে তা চূড়ান্ত হয়নি বলেও জানানো হয় ওই বৈঠক শেষে।

এ অবস্থায় দেশের কোন ওষুধ কোম্পানি টিকা উৎপাদনের জন্য অনুমোদন পাচ্ছে, সে বিষয়েই কোর কমিটির অনুমোদন নিয়ে একটা চিঠি সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের হাতে এসে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু। আর সেই চিঠির জের ধরেই রোজিনা ইসলাম এখন কারাগারে।

চিঠি সম্পর্কে রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু সোমবার (১৭ মে) রাত ৩টার দিকে বলেন, ও আমাকে যেটা বলেছে, ওর সোর্স ওকে একটা তথ্য দিয়েছে। একটা চিঠি। সেই চিঠিটাই ভ্যাকসিনের যে তিনটা কোম্পানি কোর কমিটি অনুমোদন দিয়েছে, এই তিনটা কমিটির নাম লেখা আছে যেটা কনফার্ম কিছু না।

চিঠি নিয়ে তিনি বলেন, ওই চিঠিটা সোর্স দিয়েছে। ওই যে ভ্যাকসিন নিয়ে তিনটি কমিটি সুপারিশ করেছে কারা করবে, এটা লেখা। তবে কাউকেই এখনো সুপারিশ করেনি। পরে যেটা আমি দেখেছি, ও দেখেনি। ও যখন পেয়েছে আর দেখেনি, হাতে রেখেছে, পরে দেখবে। যদি নিউজের মতো হয় নিউজ করবে, নাহলে করবে না।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ওই চিঠিটা ও পড়েওনি। ও হাতে নিয়ে ভেবেছে যে উপরে গিয়ে একটু সচিব মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে কোনো ইনফরমেশন আছে কিনা নিউজটার, আপডেট কিছু আছে কিনা ভ্যাকসিন নিয়ে!’

‘ও যখন গেছে সচিবের রুমে, তখন পিএস ছিল না। পিএসের রুমের যে কনস্টেবল, তাকে সে জিজ্ঞাসা করেছে যে পিএস সাহেব কোথায়? কনস্টেবল বলেছে আপা বাইরে আছেন, আসছেন, আপনি বসেন। ও আবার বলেছে- উনি না থাকলে কি আমার বসা ঠিক হবে? কনস্টেবল বলেছে অসুবিধা নেই, বসেন। সেখানে একটা ডেইলি স্টার পত্রিকা ছিল। সেটা ও পড়েছে ১০ থেকে ১২ সেকেন্ড। এর ভেতর ওই ছেলে আবার এসে বলে আপনি ছবি তুলেছেন ফাইলের। রোজিনা বলেছে- না, আমি ছবি তুলিনি। ’

‘এসময় কনস্টেবল বলে তাহলে আপনার মোবাইল দেন। মোবাইল দিয়ে দিয়েছে এবং সে দেখেছে মোবাইলে কোনো ছবি তোলেনি। তখন বলেছে আপনার ব্যাগে কোনো কাগজ আছে। রোজিনা তখন বলেছে না আমার ব্যাগে কোনো কাগজ নেই। এসময় অন্যরা এসে তাকে বেশ হেনস্তা করেছে, তার ব্যাগ তল্লাশি করেছে। তল্লাশি করে ওই চিঠিটা পেয়েছে। তখন বলেছে এই চিঠিটা আপনি কোথায় পেয়েছেন? তখন রোজিনা বলে- আমার এক সোর্স আমাকে চিঠিটা দিয়েছে। সোর্সের নাম বলার জন্য বলা হলে রোজিনা বলে- সাংবাদিকের ইথিকসে সোর্সের নাম বলার নিয়ম নেই। তখন ওরা বলে তাহলে আপনি এটা এখান থেকে নিয়েছেন। তখন রোজিনা রেগে বলেন, যদি মনে করেন যে আমি এটা এখান থেকে নিয়েছি, তো তাই নিয়েছি। ’

‘এরপর তার ব্যাগ ও মোবাইল আবারও তল্লাশি করা হয়। তখন মোবাইলে আগে যেসব নিউজ করা হয়েছে, সেগুলোর কিছু স্ক্রিনশট ছিল। এরপর তাকে ওখানে সাড়ে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। ’

সচিবালয় থেকে রোজিনা ইসলামকে রাতে নেওয়া হয় শাহবাগ থানায়। সবশেষে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৮ মে) বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম এ আদেশ দেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *