রেমিট্যান্স ১৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের চেয়ে কমেছে। অক্টোবর মাসে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, তা গত ১৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
সোমবার (১ নভেম্বর) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার। এরপর থেকে এত কম রেমিট্যান্স আসেনি। ১৭ মাস পর ফের রেমিট্যান্স এতটা কমেছে।
২০২১-২০২২ অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭২ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলার। আগস্ট মাসে দেশে ১৮১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল এবং জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ মার্কিন ডলার।
২০২০-২০২১ অর্থবছরের অক্টোবর মাসে ২১০ কোটি ২১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার, আগস্ট মাসে ১৯৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার এবং জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের চেয়ে এবার রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমছে। আলোচ্য অর্থবছরে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছিল ফেব্রুয়ারিতে। এর পরিমাণ ছিল ১৭৮ কোটি ৫ লাখ মার্কিন ডলার।
বরাবরের মতো এবারও বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। অক্টোবরে ব্যাংকটির মাধ্যমে ৪১ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৮৭ লাখ ডলার এবং ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে ৮ কোটি ২৬ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
এদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে অক্টোবরে ৩২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মধ্যে একটিতে এসেছে ৩ কোটি ৫২ লাখ ডলার। এছাড়া, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১২৭ কোটি ৫২ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের চার মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৭০৫ কোটি ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭৬ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার বা ১৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮৮১ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার।
রেমিট্যান্স নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক এর সঙ্গে ১ শতাংশ যোগ করে ৩ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বৈধ পথে পাঠানোর জন্য উৎসাহ দিতে এসব প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে রেমিট্যান্সে রেকর্ডও সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু করোনা কিছুটা কমে আসার পর বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা অনেকটা কমেছে। অনেকই অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর কারণে এমন হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া, করোনা মহামারির কারণে সব দেশের অর্থনীতিতে সমস্যা হচ্ছে। মানুষের আয় কমেছে। এর প্রভাব রেমিট্যান্সের ওপর পড়েছে। ফলে, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে বলে মনে করছেন তারা।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ফরেন এক্সচেঞ্জ করপোরেট শাখার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট একেএম কাউছার আলম রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘করোনার কারণে সব দেশের মানুষের আয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে, রেমিট্যান্স আগের চেয়ে কমেছে। তবে, করোনাকালেও যে হারে রেমিট্যান্স এসে রেকর্ড গড়েছিল, তা করোনা কমে আসার পর হয়নি। বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’