January 22, 2025
আঞ্চলিক

রূপালী সমবায় সমিতির ১২ হাজার টাকার ঋণে ১ লাখ ৬০ হাজার পাওনা!

ডুমুরিয়া প্রতিনিধি

ডুমুরিয়া উপজেলার রূপালী আদর্শ বহুমুখী সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে অভিয়োগের শেষ নেই। সমিতিটি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেআইনীভাবে আমানত সংগ্রহ, উচ্চহারে সুদ গ্রহণ, কর্মচারীদের বেতন না দেয়া, ঋণ না নিয়েও ঋণ পরিশোধের নোটিশ প্রদান, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে কিছু না লিখে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ভূয়া ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আবার আমানত ফেরত চেয়ে বার বার তাগাদা দিয়েও কোন সুরাহা হচ্ছে না। আবেদন নিবেদন করেও বকেয়া বেতন পাচ্ছেন না কর্মচারীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার থুকড়া বাজারে ২০০৯ সালে রূপালী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি সমিতি গঠন করা হয়। পরবর্তিতে তারা শুরুকরে উচ্চ সুদে ঋণদান কার্যক্রম। আর ঋণ প্রদানকালে ঋণের ফরমে প্রাপ্ত ঋনের জায়গা ফাকা রেখে রেভিনিউ স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়। যেখানে পরে ইচ্ছামত অংখ বসিয়ে নেয়া হয়। সুব্রত মন্ডল নামে জনৈক ব্যক্তি ১৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। বর্তমানে তাকে সুদ ও আসলসহ দাবি করা হচ্ছে ২ লাখ ১ হাজার টাকা। সুকমহাজন  নেন ২০ হাজার ৫৭ হাজার টাকা এ যাবত পরিশোধ করেছেন। এষনও তার কাছে ৮৮ হাজার টাকা পাবেন বলে দাবি করা হচ্ছে। রাজ কুমারের নেয়া ১৫ হাজারে ৫০ হাজার পরিশোধ করেও সমিতির কাছে দেনা ৬৫ হাজার টাকা।

আর এ সমস্ত চড়া সুদের টাকা আদায়ে উপজেলা সমবায় অফিসার ঋণ গ্রহিতার কাছে বকেয়া টাকা চেয়ে নোটিশ প্রদান করেছেন। রংপুর ইউনিয়নের মনোরঞ্জণ কীর্তনীয়ার স্ত্রীর ঋণের পাস বইতে লেখা রয়েছে তিনি ২০১০ সালে ১২ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেছেন। অথচ সমবায় অফিসার প্রদত্ত নোটিশে ঋণ উলে­খ করা হয়েছে ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা। যা বর্তমানে দাড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯০০ টাকা।

অপরদিকে সমিতির কর্মচারী আব্দুস সালাম খানের নামে ১০ হাজার টাকা ঋণ দেখিয়ে সুদ আসলসহ বর্তমানে  পাওনা দেখিয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এই টাকা আদায়ে চলতি মাসের ১০ তারিখে খান আব্দুস সালামকে আটকে রেখে তিনটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এ বিষয়ে খান আব্দুস সালাম ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট একটি অভিযোগ দিয়েছে। এছাড়া সমিতিতে চাকরীকালিন সময়ে বকেয়া বেতন বাবদ ৭৩ টাকা পাওনার বিষয়েও ওই আবেদনে উলে­খ করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টির এখনও কোন সুরাহা হয়নি।

অপরদিকে বেআইনীভাবে আমানত সংগ্রহ করলেও আমানতের সে অর্থ আমানতকারীদেরকে  তা ফেরত দেয়া হচ্ছে না। সমিতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। থুকড়া গ্রামের মৃত শাহাজান আলী গাজীর ছেলে মো: শফিকুল ইসলাম এই সমিতিতে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা আমানত করেন। কিন্তু বার বার আমানত ফেরত চেয়েও তিনি পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে সমবায় অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করেও তিনি আমানত ফেরত পাননি।

এ বিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিহার রঞ্জন বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমিতির সকল বিষয়ে সভাপতি আব্দুল হামিদ গাজী জানেন। আমার কিছু জানা নেই। সভাপতি আব্দুল হামিদ গাজীর বক্তব্য জানতে তার সেলফোনে বার বার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

ডুমুরিয়া উপজেলা সমবায় অফিসার এফএম সেলিম আক্তার এ বিষয়ে বলেন, রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত সমবায় সমিতি তাদের সদস্যদের মাঝে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। তবে আমানত সংগ্রহ করতে পারবেন না। ঋণ আদায়ে নোটিশ প্রদান সম্পর্কে তিনি বলেন, সমবায় সমিতিকে টিকিয়ে রাখতে মাঠ পর্যায় থেকে ঋণ আদায় করতে নোটিশ দেয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *