রুশ তেলে মূল্যসীমা বসাচ্ছে জি৭, রপ্তানি বন্ধের হুমকি রাশিয়ার
রুশ তেল আমদানিতে মূল্যসীমা (প্রাইস ক্যাপ) আরোপের ঘোষণা দিয়েছে শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি৭। এর মাধ্যমে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সক্ষমতা কমবে বলে আশা করছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতিগুলো। তবে এ ব্যবস্থার পাল্টা জবাবে মূল্যসীমা আরোপ করা দেশগুলোতে তেল রপ্তানি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে ক্রেমলিন।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) এক ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন গ্রুপ অব সেভেন (জি৭)-এর সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির অর্থমন্ত্রীরা। বৈঠক শেষে তারা ঘোষণা দিয়েছেন, মূল্যসীমার ওপর বিশ্বব্যাপী রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের সামুদ্রিক পরিবহনে সাহায্য করে এমন পরিষেবা নিষিদ্ধ করা হবে। এর ফলে রুশ তেলের শিপমেন্টের জন্য বিমা কাভার বা অর্থায়ন বন্ধ হতে পারে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রুশ তেলের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করবে দেশগুলোর ‘বৃহৎ জোট’। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরবর্তী নিষেধাজ্ঞারগুলোর পাশাপাশি কার্যকর হবে, যার মধ্যে আগামী ডিসেম্বরে সমুদ্রপথে রুশ তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
জি৭ভুক্ত দেশগুলোর এই ঘোষণার আগেই রাশিয়া হুমকি দিয়েছিল, মূল্যসীমা আরোপ করা দেশগুলোতে তেল রপ্তানি বন্ধ করে দেবে তারা।
গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক বলেছেন, বিধিনিষেধ আরোপ করা কোনো প্রতিষ্ঠান বা দেশের কাছে আমরা তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ করবো না। কারণ আমরা প্রতিযোগিতাবিহীন কাজ করতে চাই না।
বাইডেন প্রশাসন কয়েক মাস ধরেই রুশ তেলে মূল্যসীমা আরোপের জন্য চেষ্টা করছিল। পশ্চিমা দেশগুলো এরই মধ্যে রুশ জ্বালানি আমদানিতে বেশ কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছে। তবে ভারত-চীনের মতো দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়িয়ে মাসে শত শত কোটি ডলার আয় অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া
জি৭’র অর্থমন্ত্রীরা বলেছেন, বৈশ্বিক জ্বালানি মূল্যে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ওপর যুদ্ধের প্রভাব সীমিত রেখে রাশিয়ার আয় ও যুদ্ধে অর্থায়নের ক্ষমতা সীমিত করতে বিশেষভাবে এই মূল্যসীমার নকশা করা হয়েছে।
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বাস্তবায়ন ও পরিচালনা হবে খুবই জটিল। রুশ তেলের দামে যে সীমা আরোপ করা হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। তাছাড়া এটি কার্যকর হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমর্থনও প্রয়োজন।
রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপের প্রস্তাব ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিক’। এটি বৈশ্বিক তেলের বাজার ও শিল্পকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
শুক্রবার জি৭’র ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রম ঘোষণা দিয়েছে, তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে শনিবার নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন চালু করবে না। অর্থাৎ এ পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধই থাকছে।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে রাশিয়ার তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য রপ্তানির প্রায় অর্ধেকই যেতো ইউরোপে। ২০২১ সালে দৈনিক ২২ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল, ১২ লাখ ব্যারেল পরিশোধিত পণ্য ও পাঁচ লাখ ব্যারেল ডিজেল আমদানি করেছে এই জোট। ওই বছর ইউরোপে রুশ জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল জার্মানি, পোল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলো।