January 20, 2025
জাতীয়

রিজেন্ট চেয়ারম্যান সাহেদকে খুঁজছে র‌্যাব

করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ঘিরে রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে খুঁজছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। শিগগিরই তাকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

বুধবার (৮ জুলাই) র‌্যাব সদর দপ্তরের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম।

তিনি বলেন, রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো নয় জনকে আসামি করে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাহেদ পলাতক রয়েছেন। তাকে আমরা এখনো খুঁজছি।

যখন আমরা অভিযান শুরু করেছি তখন থেকেই তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। গতকাল রাতেও আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। তিনি তার মোবাইলগুলো বন্ধ করে রেখেছেন। প্রথমদিন দেখেছিলাম ফেসবুকে ছিলো, কিন্তু এখন তিনি সবকিছু থেকেই নিষ্ক্রিয়। আশা করছি দ্রুত তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবো।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অচিরেই সাহেদকে গ্রেফতারের সুখবর দিতে পারবেন আশা-প্রকাশ করে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা গত দুই রাত ধরেই তাকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন জায়গায় আমরা খোঁজ করছি। বলে রাখতে চাই, তিনি অবশ্যই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে না। কারণ, কেউ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে না। যারাই আইনের ঊর্ধ্বে যাওয়ার চেষ্টা করবে আর সেই সাহস দেখাবে অবশ্যই তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম। তার বিষয়ে অন্যান্য সংস্থাও সতর্ক রয়েছে। আশা করছি তিনি দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হবে না।

অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, করোনাকে ঘিরে আমরা নানা ধরনের অপতৎপরতা দেখেছি। শুরু থেকেই নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ব্যবহৃত গ্লাভস-মাস্ক বিক্রির বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালিয়েছি। এক পর্যায়ে বিভিন্ন ভোক্তভোগীর মাধ্যমে জানতে পারি, কিছু হাসপাতাল করোনা টেস্টকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য শুরু করেছে। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেই অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছিলাম।

রিজেন্ট হাসপাতাল হোম ডেলিভারির মতো বাসায় গিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে দ্রুততার সঙ্গে রিপোর্ট সরবরাহ করছিলো। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরপর কেঁচো খুড়তে আসলে সাপ নয়, এনাকোন্ডা বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।

গত দু’দিন ধরে রিজেন্টের বিরুদ্ধে আমরা ধারাবাহিক একটি অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তারা নমুনা নিয়ে টেস্টের সঠিক রিপোর্ট পাঠায় না। প্রায় সাড়ে চার হাজার নমুনার টেস্ট না করেই কম্পিউটার অপারেটর মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছে। এর ফলে বুঝে না বুঝে অনেকেই ভুয়া পজিটিভ হয়ে কোয়ারেন্টিনে চলে গেছেন। তারা প্রথমবার টেস্টে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা নিতেন পরবর্তী টেস্টের জন্য আবার এক থেকে দেড় হাজার টাকা আদায় করতেন।

সরকারের সঙ্গে বিনামূল্যে চিকিৎসার চুক্তি স্বাক্ষরের নামে আসলে হঠকারিতা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা রোগীদের বিপুল পরিমাণ বিল দিতে বাধ্য করেছে। পাঁচ জন সদস্যের একটি পরিবার গত ২০ দিনে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা রিজেন্টের কর্মচারী পলাশকে দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। রিজেন্ট হাসপাতাল ১০ হাজার টেস্ট করেছে। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার টেস্টের কাগজ আমাদের হাতে রয়েছে। যা সরকারের কোনো সংস্থা এ ধরনের রিপোর্ট তৈরি করেনি বলে জানতে পেরেছি। রিজেন্টের কম্পিউটার অপারেটর আমাদের বলেছে, চেয়ারম্যান নিজে ব্যক্তিগতভাবে এসব করিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি তিন মাসে প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা নিয়েছে। সেসব উৎস এবং কোথায় গিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ে মামলা দায়ের করা হবে।

রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদের বিষয়ে সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে তার নানা অপকর্মের কথা জানতে পেরেছি। বিভিন্ন সময় তিনি প্রতারণার দায়ে আটক হয়েছিলো, জেলে খেটেছেন। মিথ্যাকে কেন্দ্র করেই তার উত্থান। ভুয়া পরিচয় দিয়ে নানাভাবে প্রতারণা করেছে মানুষের সঙ্গে। তিনি একটা এমএলএম কোম্পানি খুলে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলো, যার জন্য জেলও খেটেছেন। আমরা জানতে পরেছি তার আরো অনেক নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক লাইসেন্সও নেওয়া হয়নি। উল্লেখ করতে চাই, প্রতিদিন নানা জায়গা থেকে অসংখ্য ফোন রিসিভ করছি, তারা সাহেদের অপকর্ম-অরাজতার বিষয়ে জানাচ্ছে।

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করেই তিনি প্রতারণা করতেন। প্রতারণার জন্যই ছবিগুলো তুলেছে বলে তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। প্রতারকদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। সাহেদ সবসময়ই মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসছিলো, আসলে তার কোনো পরিচয় নেই। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মানুষের সঙ্গে যে নানান অপকর্ম করেছেন, হঠকারিতা করেছে জনগণই তাকে খুঁজে বের করে নিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *