রাস্তায় হাঁটু গেড়ে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদ জানালেন ট্রুডো
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। শুক্রবার অটোয়ায় অনুষ্ঠিত বর্ণবাদ-বিরোধী র্যালিতে যোগ দিয়ে রাস্তায় হাঁটু গেড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে এদিন কানাডার পার্লামেন্টের সামনে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর সঙ্গে ‘নো জাস্টিস=নো পিস’ নামে র্যালিতে অংশ দেন ট্রুডো। এসময় দেহরক্ষী ও বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য তার সঙ্গে ছিলেন।
সমাবেশে প্রায় এক ঘণ্টার মতো ছিলেন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী। তবে এসময় কোনও বক্তব্য রাখেননি তিনি। সমাবেশে ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসে থাকেন ট্রুডো। জর্জ ফ্লয়েডকে ঠিকই একই পরিমাণ সময় এভাবে মাটিতে হাঁটু দিয়ে চেপে রাখা হয়েছিল।
এদিন পার্লামেন্ট হিলে প্রতিবাদ র্যালিতে পৌঁছাতেই বিক্ষোভকারীরা ‘ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াও’ বলে চিৎকার শুরু করেন। তবে এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি কানাডার জনপ্রিয় এ প্রধানমন্ত্রী।
এদিন মুখে কালো মাস্ক, সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরে সমাবেশস্থলে যান ট্রুডো। এসময় এক বিক্ষোভকারী তার হাতে ‘ব্লাক লাইভস ম্যাটার’ লেখা একটি কালো টিশার্ট তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী তা সাদরে গ্রহণ করলেও আর গায়ে চাপাননি। তবে এমনভাবে সেটি মেলে রাখেন যেন এর লেখা সবাই পড়তে পারে।
সমাবেশে অংশ নিয়ে প্রতিবাদকারীদের বক্তব্য মনযোগ দিয়ে শোনেন ট্রুডো। তবে বেশিরভাগ সময়ই তাকে চুপচাপ থাকতে দেখা গেছে। এভাবে ঘণ্টাখানেক থেকে আবার নিজের অফিসে ফিরে যান কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী।
সমাবেশে অংশ নেয়ার আগে জাস্টিন ট্রুডো সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বর্ণবাদ ও বৈষ্যমের বিরুদ্ধে কানাডীয় জনগণের পাশে রয়েছে তার সরকার।
এর আগে, গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি এবং বিক্ষোভ দমনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেনা মোতায়েনের হুঁশিয়ারি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল ট্রুডোকে। সেদিন হুট করে জবাব না দিয়ে প্রায় ২০ সেকেন্ড চুপচাপ ছিলেন তিনি।
এরপর কিছুটা ভেবে-চিন্তে ট্রুডো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এখনই সময় সবাইকে একত্রিত করার। এটাই সময় তাদের কথা শোনার। দশকের পর দশক উন্নতির ধারা এগিয়ে চললেও যেসব স্থানে অবিচার হচ্ছে তা জানা প্রয়োজন।
জানা যায়, মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে একটি রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করতেন ৪৬ বছর বয়সী জর্জ ফ্লয়েড। গত ২৫ মে সন্ধ্যায় প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এসময় এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রকাশ্যে রাস্তায় মাটিতে ফেলে হাঁটু দিয়ে গলা চেপে ধরেন জর্জের। এভাবে অন্তত আট মিনিট তাকে মাটিতে চেপে ধরে রাখা হয়।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, জর্জ ফ্লয়েড নিঃশ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন এবং বারবার একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তাকে বলছেন, ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’
এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় মুহূর্তেই। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। এই আন্দোলন এখন যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে।