রাসেদের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
সুমাইয়া আক্তার
সকালে ঘুম থেকে উঠতে রাসেদের একদম ইচ্ছে করেনা। সূর্য মামা জেগে ওঠার সাথে সাথে তার ঘুমের মাত্রা বেড়ে যায়। সকালে মায়ের ডাক তার কাছে অসহ্য লাগে। কেন যে সকালে তার এত ঘুম আসে!
ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে তার মা চুল ধরে টানে। রাসেদ কেঁদে দেয়।
অথচ, স্কুল ছুটির দিনে ও খুব ভোরে জেগে ওঠে। হাত-মুখ ধৌত করে দাদীমার সাথে বাগানে হাঁটে। দাদীমার সঙ্গে গল্প করে। তার রোজ স্কুলে যেতে ইচ্ছে করেনা। পড়তে ভালো লাগেনা। বইয়ের লেখা গুলো তার কাছে নিমপাতার মতো তেঁতো মনে হয়। কে যে বই আবিষ্কার করেছে!
ঠিক ন’টার সময় ক্লাস শুরু। বাড়ি থেকে স্কুল পায়ে হেঁটে ১০ মিনিটের পথ। ওর মা ওকে স্কুলে পৌঁছে দেয়। বইয়ের ব্যাগ মা সামনের বেঞ্চে রাখলেও মা চলে যাওয়ার পর ব্যাগ নিয়ে সে পিছনে গিয়ে বসে। সামনে বসলে টিচার বেশি পড়া জিজ্ঞেস করে। বই থেকে নানাবিধ প্রশ্ন ধরে। ও কিছুই পারেনা ক্লাসে।
একটানা চার খানা পিরিয়ড। একটা শেষ হতেই আরেকটা শুরু। একজন টিচার যেতে যেতেই আর একজন টিচার ক্লাসে আসে। কি বিরক্তিকর! ক্লাসে কোন মজা নেই। শুধু পড়া আর পড়া। প্রতিদিন একই ধরা-বাঁধা নিয়ম তার পছন্দ হয়না। আবার পড়া না পারলে টিচার তিরস্কার করে, সহপাঠীরা মুখ টিপে হাসে, মা বকে। এগুলো রাসেদের ভালো লাগেনা। কেনো পড়াশুনা অন্যরকম হয়না, এভাবে পড়তে রাসেদের যে মন বসেনা!!
তবে রাসেদের বাবা রাসেদকে কখনো বকে না। ছুটির দিনে রাসেদকে ওর বাবা সময় দেয়। বাবাকে পেলে রাসেদ ভীষণ খুশি হয়। বাবা ওর কাছে পড়া জিজ্ঞেস করে না। বরং ওর সাথে মজার মজার গল্প করে। ওর মনের কথা জানতে চায়। ওকে ভালো কাজে অনুপ্রেরণা দেয়। আর খেলার ছলে ওর ছোট ছোট অনুভূতিগুলো জেনে নেয়। তারপর যখন রাসেদ পড়তে চায় তখন পড়ায়। বাবার কাছে পড়তে রাসেদের ভালো লাগে। বইয়ের পাতাগুলো তখন আনন্দময় হয়ে ওঠে। ওর বাবা ওকে গল্পের ছলে, অভিনয় করে পড়ায়। বাবা বিভিন্ন দেশের কথা, ইতিহাসের কথা বলে, বড় বড় মনীষীদের কথা বলে। তাদের ছোটবেলার ঘটনা বলে। কেমন করে তাদের মতো হতে পারবে সেটাও বলে।
বাবা বিভিন্ন ভালো কাজের ভিডিয়ো দেখায়। রাসেদকে সব সময় ওর বাবা উৎসাহ দেয়, তার ভালো কাজগুলোর প্রশংসা করে। তখন রাসেদের সত্যিই ইচ্ছা হয় আরো ভালো কিছু করতে, সবাইকে চমকে দিতে!
বাবা রাসেদকে বলে, “সত্যিই তুমি পারবে।”
আর রাসেদও হাসি মুখে চটপট সকল পড়া করে ফেলে।
তাই বাবাই ওর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।