November 23, 2024
আঞ্চলিক

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেখে যেতে চান বীরাঙ্গনা আনোয়ারা বেগম

ফুলবাড়ীগেট প্রতিনিধি

মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতার টাকা বা সহায়তা নয়, মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেখে যেতে চান মোঃ মান্নান মাতবারের স্ত্রী বীরাঙ্গনা আনোয়ারা বেগম। বীরঙ্গনা এই যোদ্ধা ১৯৭১ সালে পাকসেনা ও রাজাকাররা আনোয়ারা বেগমকে ধরে নিয়ে তাদের  ক্যাম্পে নির্যাতন ও জোরপূর্বক ধর্ষণ করে, লোক লজ্জায় তিনি এলাকা ছেড়ে খুলনার মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়ায় চলে আসেন। বর্তমানে ভাড়া বাসায় অসুস্থ স্বামী মোঃ মান্নান মাতবারকে নিয়ে চরম অর্থ কষ্ট নিয়ে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে দিনভর এখানে সেখানে খাল বিল থেকে শাকপাতা কুড়িয়ে মুন্সীপাড়া বৌ বাজারে বিক্রি করে তিনি সংসার চালাচ্ছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারা বেগম ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারী বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কামটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের আগুনঝরা ডাকে উজ্জীবিত হয়ে শত প্রতিকুলতাকে পেছনে ফেলে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন আনোয়ারা বেগম। পাকসেনা ও রাজাকারদের দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার পরও দেশের টানে তিনি ৬নং সাবসেক্টরের অধীনে ফকিরহাটের মনসা জমিদার বাড়ী ও বলটিটুপ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণে তিনি রাইফেল-১১, স্টেনগান-২৮ ও কাটা রাইফেল-০৪ চালানোতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ফকিরহাটের  কমান্ডার মানস ঘোষের নেতৃত্বে ১৯৭১ এর  ৮ ও ৯ এপ্রিল গাটবো ও মানসা খেয়াঘাট এলাকায় সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়ে বিজয় অর্জন করেন। সে দিনের কথা মনে করে আনোয়ারা বেগম স্মৃতিচারণ করে বলেন কয়েকজন পাক হানাদারদের লাশ টেনে হিচড়ে নদীতে ফেলে দেন। অবশ্য পরের দিনের যুদ্ধে তাদের ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হবার কথাও জানান আনোয়ারা। এর পরও ১৩ ও ১৮ এপ্রিল ১৯৭১ কমান্ডার আবু মোড়লের নেতৃত্বে নিজ জন্মভিটা কামটাতেও তিনি হানাদারদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেন। তার যুদ্ধকালীন সহযোদ্ধা ফকিরহাটের মোঃ আকবর আলী মোল্ল্যা (মুক্তিবার্তা-৩৫২১) ও স্থানীয় মেম্বর কওসার ও আনোয়ারা বেগমের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি খুলনা চলে আসার পর ফকিরহাট উপজেলার মৌভোগ মানসা এলাকার শেখ ইউসুফের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ২০১৪ সালে অনলাইনে মুক্তিযোদ্ধা হবার আবেদন করে যার ক্রমিক নং-৬২ জিডি নং- ১৬৬৭৬৯ ফকিরহাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই কমিটি ২৭এপ্রিল ২০১৭ তাং ইউসুফ শেখের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম কে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে সুপারিশ করে। মূলত আমার ভাতার টাকার ভূয়া বীরঙ্গনা সেজে ইউসুফ শেখের স্ত্রী আনোয়ারা ২০১৪ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকা  উওোলন করে যাচ্ছে। নিজের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে ব্যর্থ হয়ে এ বীর সেনানী আজ বড় ক্লান্ত আর অসহায় হয়ে পড়েছে। তিনি গত ১৬ আক্টোবর ২০১৯ তারিখে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে প্রকৃত বীরঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি ও ভুয়া বীরাঙ্গনা সেজে ফকিরহাট উপজেলার মৌভোগ মানসা এলাকার শেখ ইউসুফের স্ত্রী আনোয়ারার মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতার টাকা উওোলনের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক মুক্তিযোদ্ধাভাতা বন্ধ সহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী জানান।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *