রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের ধর্মঘটে উত্তাল খুলনা-যশোর শিল্পাঞ্চল
* অগ্নিসংযোগ, রাজপথ-রেলপথ অবরোধ
* রাজপথেই ইফতার ও নামাজ আদায়
দ: প্রতিবেদক
বকেয়া মজুরী, বেতনসহ ৯ দফা দাবিতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা টানা ৯ দিন কর্মবিরতি পালন করছে। বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিকলীগ ও সিবিএ, নন-সিবিএ’র ডাকা গতকাল থেকে দেশের ২৬টি পাটকলে কর্মবিরতি ও অবরোধ কর্মসূচি তুমুল ভাবে পালন করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ মজুরী ও বেতন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে।
দেশের ২৬ টি পাটকলে গতকাল থেকে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের পাশাপাশি ৩ ঘন্টা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি। অনির্দিষ্টকালের কর্মসূচির প্রথম দিনে খুলনা ও যশোর অঞ্চলের পাটকল শ্রমিক আন্দোলনে ছিল উত্তাল। সকাল থেকে প্রত্যেকটি মিল গেটের সামনে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা টায়ারে আগুন জ¦ালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। ভোর থেকে শিল্পাঞ্চল খালিশপুরের ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, দিঘলিয়ার স্টার, আটরা শিল্প এলাকার আলিম, ইর্ষ্টান, নোয়াপাড়া শিল্প এলাকার কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলের শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নেয়। বিআইডিসি রোডের বিভিন্ন স্থানে টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। বেলা সাড়ে ৩টায় স্ব-স্ব মিলগেটে সমবেত হয় শ্রমিকরা। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে খুলনা যশোর মহাসড়কের নতুনরাস্তা মোড়, আটরা শিল্প এলকার আলিম জুট মিলের সামনে ও নোয়াপাড়া শিল্প এলাকার কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলের মধ্যবর্র্তী স্থানে সড়কের উপর অবস্থান করে ৯টি মিলের কয়েক হাজার শ্রমিক। সেখানেও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে। এ সময় খুলনা যশোর মহাসড়কের তিনটি স্থানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দূরের যাত্রীরা পড়ে চরম ভোগান্তিতে। কর্মসূচি চলাকালে বিজেএমসির চেয়াম্যানের পদত্যাগসহ বিজেএমসি বিলুপ্তর ¯েøাগান দেয় আন্দোলন কারীরা।
অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে শ্রমিক নেতারা প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিকলীগের খুলনা যশোর আঞ্চলের আহবায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন। বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সরদার মোতাহার হোসেন, শ্রমিক নেতা মোঃ সোহরাব হোসেন, মাওঃ হেমায়েত উদ্দিন আজাদী, পান্নু মিয়া, বেল্লাল মল্লিক, আঃ মান্নান, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, শেখ মোঃ ইব্রাহিম, আবু হানিফ, বাচ্চু মিয়া, আক্তার হোসেন, হেমায়েত হোসেন, নুর ইসলামসহ অন্যান্য মিলের শ্রমিক নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবাদ সভায় শ্রমিক নেতারা বলেন, এতদিন স্বেচ্ছায় শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। এখন থেকে পাটকল শ্রমিকলীগ ও সিবিএ, নন- সিবিএর ডাকে আন্দোলন কর্মসূচি চলবে।
শ্রমিক নেতারা জানান, বিজেএমসি ২৫ এপ্রিল বকেয়া মজুরী, বেতন প্রদানসহ জাতীয় মজুরী কমিশন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রæতি দিয়ে ছিল। বিজেএমসির কর্তরা সে প্রতিশ্রæতি রক্ষা করতে ব্যার্থ হয়েছে। ফলে রমজান মাসে ইফতারি ও সেহেরি খাওয়ার টাকা নেই শ্রমিকদের হাতে। পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধহারে আছে শ্রমিকরা। শ্রমিক সন্তানরা স্কুল, কলেজের ফি দিতে পরছেনা। সন্তানদের পড়া লেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অতি মানবেতর জীবন যাপন করছে শ্রমিকসহ তাদের পরিবার। এভাবে আর চলতে পারেনা, শ্রমিকদের একটা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুমকি প্রদান করেন শ্রমিক নেতারা। দেশের শ্রমিক অঞ্চলে তুমুল কর্মসূচি শুরু হওয়ায় শ্রমিক নেতারা বলেন, পেটে ভাত না থাকলে ঘরে বসে লাভ নেই, আন্দোলন করেন, আন্দোলন করলে সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে। এ সময় বিজেএমসি থেকে প্রত্যোকটি মিলের ব্যাংক বুথে টাকা আসলে এবং শ্রমিকরা টাকা হাতে পেলে তবে আন্দোলন স্থগিত করা হবে।