রাশিয়ার ভ্যাকসিনের অনুমোদনের ঘোষণা দিলেন পুতিন
বিশ্বের প্রথম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিয়েছে জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইতোমধ্যে তার মেয়ে এই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। মঙ্গলবার রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
পুতিন বলেছেন, মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি করোনার এই ভ্যাকসিন মঙ্গলবার রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত পেয়েছে। কোভিড-১৯ এর এই ভ্যাকসিনের গণহারে উৎপাদন শিগগিরই শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, তার নিজের মেয়ে ইতোমধ্যে রুশ বিজ্ঞানীদের তৈরি করোনার এই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। পুতিন বলেন, ভ্যাকসিন নেয়ার পর তার মেয়ের শরীরের তাপমাত্রা হালকা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু দ্রুতই তা কমে যায়।
‘আমার এক মেয়ে ভ্যাকসিনটি নিয়েছে। এদিক থেকে তিনি ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তার শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ হয়েছিল, পরদিন ৩৭। এতটুকুই।’
এদিকে রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ট্যাটিয়ানা গোলিকোভা বলেন, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে প্রথম এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। তবে সাধারণ জনগণের জন্য ভ্যাকসিনটি সহজলভ্য হবে আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে।
বিশ্বে প্রথম হিসেবে রাশিয়ার অনুমোদিত করোনাভাইরাসের এই ভ্যাকসিনের সুরক্ষা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তবে মানবদেহে পরীক্ষার মাত্র দুই মাসের মধ্যে ভ্যাকসিনটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ায় অনেকেই রাশিয়ার বৈজ্ঞানিক সক্ষমতারও প্রশংসা করেছেন।
ভ্যাকসিনটির সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা জানতে শেষ ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও চলমান। তার আগেই রাশিয়ার জনগণের মাঝে ভ্যাকসিনটি গণহারে প্রয়োগের অনুমতি পেল।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত সরকারি এক বৈঠকে পুতিন বলেন, মস্কোর গ্যামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরিকৃত ভ্যাকসিনটি নিরাপদ। আমি জানি, এটা বেশ কার্যকরভাবেই কাজ করে এবং শক্তিশালী ইমিউনিটি গড়ে তোলে। আমি আবারও বলছি- প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা উতড়ে গেছে এই ভ্যাকসিন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষরা কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় সুরক্ষার বিষয়ে কোনও ধরনের আপোষ করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ ধরনের ভ্যাকসিন উৎপাদনের পেছনে সরকারের প্রতি জনগণের ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস এবং আস্থাহীনতা কাজ করছে বলে সম্প্রতি কিছু জরিপে দেখা গেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তা বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে গেছে এবং মারা গেছেন ৭ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি মানুষ।
বিশ্বজুড়ে করোনার তাণ্ডব চললেও এখন পর্যন্ত রাশিয়া ছাড়া অন্য কোনও দেশ এর ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের তৈরি অন্তত দুই শতাধিক ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ২৪টি মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে পৌঁঁছেছে।
চলতি বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের দিকে করোনার অন্যান্য ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রত্যাশা করছেন।