রামপালে অস্ত্রের মুখে মৎস্য ঘের দখল ও লুটপাটের অভিযোগ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে একটি মৎস্য ঘের দখল ও ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় ওই ঘেরের মালিকদের মারপিটসহ নানা ধরণের হুমকি ধামকি দিয়েছেন ওই সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে রামপাল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রামপাল উপজেলার ৭নং পেড়ীখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল ওই ইউনিয়নের কাটাখারী গ্রামের পুর্ব বিলে ৩৭০ বিঘার একটি ঘেরের রেজিস্ট্রি মালিক। ঘেরটি স্থানীয় প্রায় ৬০জন জমির মালিককে নিয়ে তিনি সমবায় ভিত্তিতে অনেক বছর থেকে মৎস্য চাষ করে আসছেন। সম্প্রতি সময়ে এলাকার একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনী ওই ঘেরটি দখলের চেষ্টা করেছেন। তারা বিভিন্ন সময়ে ওই ঘেরের মালিকদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে না পেয়ে মাছ লুট করেছেন। অসহায় ঘের মালিকরা এ বিষয়ে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল পায়নি।
চলতি বছর ঘেরটিতে পুনরায় সমবায় ভিত্তিতে মাছ চাষের প্রস্তুতি চলার মুহুর্তে ওই সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করে। এতে ঘের মালিকরা রাজি না হওয়ায় আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ওই গ্রুপের প্রধান জাহাঙ্গীর হাওলাদারের নেতৃত্বে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশী অস্ত্রসহ প্রায় ৩০/৪০ জন হামলা চালায়। এসময় তারা ঘেরের উপস্থিত মালিক পক্ষের লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুটপাট চালায়।
এ বিষয়ে পেড়ীখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল জানান, বিগত ১৭-১৮বছর ধরে স্থানীয় জমির মালিকদের সাথে সমন্বয় করে সমবায় ভিত্তিতে ঘেরটিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। কিন্তু গত বছর থেকে কিছু জমির মালিক আলাদা তাদের জমি ঘিরে মাছ চাষ করতে চাওয়ায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। এবিষয়ে তাদের সাথে কোন বিবাদে না গিয়ে মিমাংসার চেষ্টা করেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। তবে মিমাংসার জন্য দু’পক্ষের মধ্যে স্থানীয়ভাবে বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।
ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য হাওলাদার দেলোয়ার হোসেন জানান, এই গ্রুপটি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করে। একারনে তাদের এ নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না কেউ। পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে উল্টে বিপাকে পড়তে হয়। প্রকৃত জমির মালিকদের সাথে নিয়ে মাছ চাষ করতে গিয়েও সন্ত্রাসীদের মোটা অংকের চাঁদা না দিলে বিপদ চলে আসে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
৩নং ভোজপাতিয়া ইউনিয়নের মেম্বার আঃ হাদী মল্লিক জানান, ওই ঘেরে আমার নিজের ৭একর অর্থাৎ ২১বিঘা জমি রয়েছে। ২০০৭সাল থেকে আমরা ঘেরটি জমির মালিকদের নিয়ে সমবায় ভিত্তিতে মাছ চাষ করে আসছি। কিন্তু এখন সন্ত্রাসীদের চাঁদা না দিলে লুটপাটের শিকার হতে হচ্ছে।
এবছর ঘেরটি জমির মালিকদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরিচালনার দায়িত্ব নেন মোঃ সোহাগ আকঁন। তিনি সুন্দরবনের বনদস্যু মাষ্টার বাহিনীতে ছিলেন। ২০১৬সালে সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণের মাধ্যম স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। তিনি সকলের সাথে মিলে মিশে সৎ উপায়ে ব্যবসার চেষ্টা করলেও ওই সন্ত্রাসী গ্রুপটি তা হতে দিচ্ছেনা। তারা সোহাগ আকঁনকে নানাভাবে হয়রানী করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০১৯ সালের ১লা নভেম্বর বাগেরহাটের শেখ হেলালউদ্দিন স্টেডিয়ামে দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের বর্ষপুর্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে বলেছিলেন, আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা এসকল মানুষ গুলোকে অহেতুক যাতে কেউ হয়রানী না করেন। একই সাথে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি, র্যাব প্রধান (বর্তমানে পুলিশের আইজিপি) বেনজীর আহমেদ একই কথা বলেছিলেন।
হতাশা প্রকাশ করে সোহাগ আকঁন বলেন, কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে থাকতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। নানাভাবে হয়রানী ও মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। এসকল বিষয় গুলো তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে নজর দিতে অনুরোধ জানান।
রামপাল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, আজ শুক্রবার সকালে ঘেরে গন্ডগোলের খবর পেয়ে ফোর্সসহ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখা হচ্ছে।