রঙিন মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী কলারোয়ার সাইফুল গাজী
কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
কলারোয়ায় রঙিন মাছ চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ‘রঙিন মাছের কারিগর’ সাইফুল ইসলাম গাজী। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ব্রজাবকসা গ্রামের সাইফুল ইসলাম প্রথম কলারোয়াতে রঙিন মাছের (অ্যাকুয়ারিয়ামের জন্য) চাষ শুরু করেন। গড়ে তোলেন ‘রেজা অ্যাকুরিয়াম ফিস এ্যান্ড হ্যাচারী’ নামে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। পরিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে বেশিদূর পড়াশুনা করতে পারেননি সাইফুল ইসলাম। কাজ করতেন ঢাকার মিরপুরে এক গার্মেন্টে ফ্যাক্টারীতে। এক সময় ভালো কাজের সন্ধ্যানে ভারতে চলে যান তিনি। সেখানে এক বন্ধুর সহযোগিতায় রঙিন মাছ উৎপদনকারী এক প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগ দেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যে আয়ত্ব করেন রঙিন মাছ উৎপাদনের কলাকৌশল। সেখান থেকে বাড়ীতে ফিরে এসে শুরু করেন রঙিন মাছের চাষ।
৩৯ বছর বয়সী সাইফুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান- ৬শ’২০ টাকা পুজি নিয়ে তার ব্যবসা শুরু। নিজ অভিজ্ঞতায় প্রজননের সময় বিশেষ পদ্ধতিতে ডিমে জিং ব্যবহার করে কিছু মাছের রং বদলে দিতে সক্ষম হন। পরে এই রঙিন মাছ সাতক্ষীরা সদরে কয়েকটি অ্যাকুরিয়াম ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে ভালো দামও পান তিনি। এরপর থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে জানা যায়-ঢাকা আহছানিয়া মিশন থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ২টি পুকুর ইজারা নেন তিনি। এরপর পুকুরের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে ৩০ একর জমিতে রুপান্তর করেছেন। তৈরি করেছেন মাছের ডিম প্রজননের জন্য আলাদা নার্সারি। সাতক্ষীরা, খুলনাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা তার থেকে রঙিন মাছ কিনে ব্যবসায় করেন।
শুক্রবার সকালে ব্রজবাকসা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- ২৬টি পুকুর লিজ নিয়ে রঙিন মাছ উৎপাদন করছেন সাইফুল ইসলাম। এতে ২৬জন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। গাপ্পি মলি, গোল্ড ফিস, ফাইটার, প্লাটি, সারভে টেট্টা, কমেট, মিল্কি, মনটেল মলি, কৈ কার্প, অরেন্ডা, সিল্কি, কিচিং গোরামিনসহ ২৬ প্রজাতির মাছ রয়েছে তার হ্যাচারীতে। প্রতিটি মাছ সর্বনিম্ন ১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১২০থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। তিনি আরো বলেন-বাংলাদেশে এই রঙিন মাছ চাষ হচ্ছে তিন জায়গায়। তিনি বাংলাদেশে প্রথম চাষী। রঙিন মাছ চাষ করে নিজের স্বপ্নগুলোকে রাঙিয়ে তুলেছেন তিনি। মাছ বিক্রয় করে তিনি ৬বিঘা জমিও ক্রয় করেছেন। বর্তমানে তার হ্যাচারীতে ২ কোটি টাকারও বেশি মাছ রয়েছে।
কলারোয়ায় উৎপাদিত রঙিন মাছ বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব দাবি করে তিনি বলেন- সরকার সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ ও বেকারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো অনেকে এ পেশায় এগিয়ে আসবে। তিনিও এলাকার কয়েকজন যুবককে উৎসাহ দিয়ে রঙ্গিন মাছের চাষ করতে সহযোগিতা করছেন বলে তিনি জানান। কলারোয়া উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে জানান- তারা চেষ্টা করছেন তাকে সহায়তা করার জন্য এবং কয়েকজন মাছ চাষিকে রঙিন মাছ চাষের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে ‘রঙিন মাছের কারিগর’ সাইফুল ইসলাম গাজী অভিযোগ করে বলেন- তার হ্যাচারীতে গত ২মাস ধরে মাছ চুরি শুরু হয়েছে। এলাকার একটি ছেলে এ মাছ চুরি করে তার ৩টি পুকুরে নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। তিনি খুব অসুস্থ। তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সৃ-দৃষ্টি কামনা করেছেন।