যৌন কেলেঙ্কারি: দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু
আত্মহত্যাকারী মার্কিন বিনিয়োগকারী জেফ্রি এপস্টেইন কেলেঙ্কারি ব্রিটিশ রাজপরিবারের কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে জানিয়ে রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু।
বুধবার বাকিংহাম প্যালেস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে রানি এলিজাবেথের দ্বিতীয় এ সন্তান দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার এ ঘোষণা দেন, জানিয়েছে বিবিসি।
এপস্টেইনের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ বলেও বর্ণনা করেছেন তিনি।
৫৯ বছর বয়সী প্রিন্স এন্ড্রুর বিরুদ্ধে এপস্টেইনের সরবরাহ করা ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীর সঙ্গে যৌনমিলনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
যৌনতার উদ্দেশ্যে মানব পাচারের কয়েকটি অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে বিচারের অপেক্ষায় থাকা এপস্টেইন চলতি বছরের অগাস্টে জেলের ভেতরেই আত্মহত্যা করেন।
শনিবার বিবিসিতে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক ও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন অ্যান্ড্রু। ওই সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হওয়ার পর থেকে ব্রিটিশ এ যুবরাজের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে।
সমালোচকদের অনেকেই বলছেন, প্রিন্স অ্যান্ড্রু অভিযোগ খণ্ডাতে যেসব কথা বলেছেন তা মোটেও সন্তোষজনক নয়।
প্রিন্সের জবানিতে নির্যাতিতদের প্রতি খুব সামান্যই সহানুভূতি ছিল বলে অভিযোগ করেছেন এপস্টেইনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের আইনজীবীরা।
ওই সাক্ষাৎকারের চারদিন পরও ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোর শিরোনাম দখল করে রেখেছিল অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ। এন্ড্রুকে নিয়ে এ গুঞ্জনে এমনকি ঢাকা পড়ে গেছে সপ্তাহ দুয়েক পর হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনও।
যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠার পর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রিন্স অ্যান্ড্রু সংশ্লিষ্ট দাতব্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সংস্রব ত্যাগ করার ঘোষণা দিলে রাজপরিবারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে।
এর মধ্যেই বুধবার অ্যান্ড্রু ‘আপাতত রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো’ এবং এপস্টেইনকে নিয়ে পুলিশের তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
“গত কয়েকদিনে এটি আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, আমার প্রাক্তন বন্ধু জেফ্রি এপস্টেইনের সঙ্গে আমার সম্পর্কের বিষয়টি আমার পরিবারের কার্যক্রমে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। সেজন্য আমি হার মেজেস্ট্রির (রানি এলিজাবেথ) কাছে সামনের দিনগুলোতে রাজকীয় দায়িত্ব পালন থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুমতি চাই; তিনি অনুমতি দিয়েছেন,” বাকিংহাম প্যালেস থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছেন ডিউক অব ইয়র্ক।
“প্রয়োজন হলে, অবশ্যই, আমি সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের তদন্তে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক,” বলেছেন এন্ড্রু।
যুবরাজকে ঘিরে এ কেলেঙ্কারির বিষয়টি যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতেও বড় ধরনের ছায়া ফেলেছে।
মঙ্গলবার রাতে আইটিভিতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনের নির্বাচনী বিতর্কেও প্রসঙ্গটি উঠেছিল।
কনজারভেটিভ পার্টির নেতা জনসন তখন বলেছিলেন, রাজপরিবার সব ধরনের ‘নিন্দা ও ভর্ৎসনার ঊর্ধ্বে’।
অন্যদিকে করবিনের মতে, রাজপরিবারের খানিকটা ‘উন্নতি ঘটানো দরকার’। প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে যেসব ‘গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে’ সেগুলোর জবাব জানা জরুরি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিবিসি লিখেছে, রানি এলিজাবেথের তিন ছেলের মধ্যে ‘সবচেয়ে প্রিয়’ প্রিন্স অ্যান্ড্রু গত কয়েক বছর ধরেই এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সমালোচনার মুখে ছিলেন।