যে কারণে ক্রিকেটার হতে পারেননি ইরফান খান
কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন ইরফান খান। মৃত্যুর আগে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় ও শক্তিশালী এই অভিনেতা (৫৩)। বলিউড এবং হলিউডে তার অসাধারণ সব চলচ্চিত্রের কথা কিছুতেই ভোলার নয়। তবে তার জীবনের একটি অধ্যায়ের কথা হয়তো অনেকেরই অজানা। এই প্রতিভাবান অভিনেতা একসময় ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন।
অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ার আগে ক্রিকেটের প্রতি দারুণ ঝোঁক ছিল ইরফানের। ক্রিকেটার হওয়ার জন্য প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছিলেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন, মোটামুটি ভালোই ক্রিকেট খেলতেন তিনি। কিন্তু অর্থের অভাবে ক্যারিয়ার শুরুর আগেই তাকে স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয়। তিনি ছিলেন অলরাউন্ডার কিন্তু বোলিংটাই বেশি উপভোগ করতেন।
ওই সাক্ষাৎকারে ইরফান আরও বলেছিলেন, ‘দলের অধিনায়ক আমার বোলিং পছন্দ করতেন, তাই আমাকে বোলার হিসেবেই দেখতে চাইতেন তিনি। তিনি প্রায়ই আমাকে বলতেন, আমাকে ভালো একটা বল করে দেখাও। আমি শুধু বল থ্রো করতাম এবং যেকোনোভাবে আমি মাঝে মাঝে উইকেটও পেয়ে যেতাম।’
টুকটাক খেলাধুলা চালিয়ে গেলেও বাড়ির আর্থিক অবস্থা তখন এতটাই খারাপ যে ক্রিকেট খেলার কথা পরিবারের কাউকে বলতে পারতেন না ইরফান। ফলে প্রায়ই মিথ্যা কথা বলতে হতো। তরুণ ইরফানের জন্য এটা বেশ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে ক্রিকেটীয় প্রতিভার কারণে সিকে নাইডু টুর্নামেন্টের অনূর্ধ্ব-২৩ দলে ডাকও পেয়ে যান তিনি। কিন্তু মাত্র ৬০০ রুপি জোগাড় করতে না পারায় চূড়ান্ত হতাশায় পুড়তে হয় তাকে।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইরফান বলেছিলেন, ‘আমি ক্রিকেটার হতেই চেয়েছিলাম। জয়পুরে (রাজস্থানের রাজধানী) প্রথম শ্রেণির দলে সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার ছিলাম আমি। আমি সেখান থেকেই ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলাম। আমি সিকে নাইডু ট্রফিতে ডাক পেলাম। আমার অর্থের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কার কাছে চাইবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি কারও কাছে ৬০০ রুপি চাইতে পারিনি। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম আর ক্রিকেট নয়।’
ক্রিকেট ছাড়ার পর ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় ভর্তি হন ইরফান। সেই অর্থও তা হাতে ছিল না। পরে ভর্তির ৩০০ রুপির ব্যবস্থা তার বোন করে দেন।
কেন ক্রিকেট ছেড়ে অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, সেই ব্যাখাও দিয়েছেন ইরফান। দুই পেশার পার্থক্য করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটকে বিদায় বলার সিদ্ধান্তটা আমি বুঝেশুনেই নিয়েছিলাম। (ক্রিকেটে) সারা দেশ থেকে মাত্র ১১ জন্য খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পায়। অভিনেতাদের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এখানে কোনো বয়সসীমা নেই। যত পরিশ্রম করবেন…আপনি নিজেই নিজের অস্ত্র।’
ইরফান ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন বিসর্জন দিলেও খেলাটির প্রতি তার ভালোবাসা ঠিকই ছিল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে তিনি একেবারেই পছন্দ করতেন না। তার মতে খেলাটাকে নষ্ট করছে এই সংক্ষিপ্ত পরিসরের ফরম্যাট। তার কাছে টেস্ট আর ওয়ানডে ছিল আদর্শ ক্রিকেট। ২০১৪ সালে একবার তিনি বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটকে এত নিচে নামাতেই হবে! এটা (টি-টোয়েন্টি) সময় নষ্ট ছাড়া কিছু নয়। টেস্ট ম্যাচের সৌন্দর্য আর নাটকীয়তার কাছে এটা কিছুই নয়। এই টি-টোয়েন্টি খেলাটার সর্বনাশ করছে।’
ইরফান ক্রিকেটার না হওয়ায় ক্রিকেটের ক্ষতি হলেও চলচ্চিত্র জগতের লাভ হয়েছে। কারণ শুধু ভারতেই সফল অভিনেতা ছিলেন না, ভারত ছাড়িয়ে সুদূর হলিউডেও আসন গেড়ে বসেছিলেন তিনি। পিকু, দ্য লাঞ্চবক্স, স্লামডগ মিলিয়নিয়ার, মকবুল, ইনফার্নোসহ আরও অসংখ্য সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
পিকুখ্যাত এ তারকা অভিনেতা দীর্ঘদিন কোলন ইনফেকশনসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। সবশেষ তিনি মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে ইরফান খানের মুখপাত্র।
গত শনিবার (২৫ এপ্রিল) জয়পুরে বাড়িতে ইরফান খানের মা সইদা বেগম মারা যান। ভারতে চলমান লকডাউনের কারণে মাকে শেষবারে মতো দেখতে পারেননি তিনি। এরই মধ্যে ইরফান খান নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরফান খানের নিউরো অ্যান্ডোক্রিন টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে আসে। এরপর দীর্ঘ সময় লন্ডনে চিকিৎসা হয় এই অভিনেতার। গত বছর এপ্রিলে ভারতে ফেরেন তিনি।