যুদ্ধ আর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় মানুষ কষ্ট পাচ্ছে: শেখ হাসিনা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এটিকে কেন্দ্র আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় সারা বিশ্বের সরবরাহ চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সারা বিশ্বের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। ’
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত আটতলা অফিস ভবন উদ্বোধন এবং ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে (ভার্চ্যুয়াল) প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ভবনের হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, যখন সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে বিরাট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ঠিক সেই সময় রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বের মানুষের অবস্থা আরও করুন হয়ে যাচ্ছে, আরও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর আমেরিকা যে, স্যাংশন দিয়েছে। এর ফলে আমাদের পণ্যপ্রাপ্তিতে বা যেগুলো আমরা আমদানি করি সেখানে বিরাট বাধা আসছে। শুধু তাই নয়, পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। কোথায় প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী পাবো সেই প্রাপ্তির ক্ষেত্রটাও সংকুচিত হয়ে গেছে। ’
‘এই প্রভাবটা শুধু বাংলাদেশ না, এটা আমি মনে করি আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে সারা বিশ্বব্যাপী এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ কিন্তু কষ্ট ভোগ করছে। এটা আসলে সবার, উন্নত দেশগুলোকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত। আমেরিকার এটা বিবেচনা করা উচিত। তারা যে স্যাংশন দিচ্ছে তাতে তাদের দেশের লোকও কষ্ট পাচ্ছে। সেদিকেও তাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। ’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার ওপর আমেরিকার স্যাংশনের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই স্যাংশন যাদের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন তাদেরকে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন। কিন্তু আসলে কতটুকু তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ হচ্ছে সব দেশে। উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ সব দেশের মানুষই কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে। নিম্নআয়ের দেশ সব দেশেই কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে। করোনা মহামারি থেকে কেবল আমরা একটু উদ্ধার হচ্ছিলাম। তখনই এই যুদ্ধ আর স্যাংশন। যেটা সত্যিই আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। ’
বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক করতে স্যাংশন থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্যাংশন দিয়ে কোন দেশ বা জাতিকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেটা নিশ্চয়ই এখন দেখতে পাচ্ছেন। তার প্রভাব নিজের দেশের ওপরও পড়ে। কাজেই এই স্যাংশন তুলে দেওয়া এবং পণ্য পরিবহন সহজ করা। যুদ্ধটা আপনারা করতে থাকেন। কিন্তু পণ্য পরিবহন আমদানি-রপ্তানি যাতে সহজভাবে হয় আর সাধারণ মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। খাদ্য মানুষের সব থেকে বড় চাহিদা। সেখানেই অনেক সমস্যায় পড়ে গেছে অনেক উন্নত দেশেও। প্রত্যেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা চেষ্টা করছি, আমরা উৎপাদন বাড়াবো। আমাদের খাদ্যটা যেন আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, সেই ব্যবস্থাও আমরা করবো। যদি অন্য কাউকে সাহায্য করতে পারি সেটাও করবো। কিন্তু উৎপাদন করতে গেলে আমাদের সার প্রয়োজন, ডিজেল প্রয়োজন, বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন সেটা আমরা পাচ্ছি না। এভাবে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কী অর্থ থাকতে পারে? আমি ঠিক জানি না। এখানেও তো আমি বলবো যে একদিকে বলতে গেলে এটাও তো মানবাধিকার লঙ্ঘন করার সামিল। মানুষের যে অধিকার সেটা থেকে বঞ্চিত করা ঠিক না। ’
‘আশা করি, একই দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেওয়া এখান থেকে সরে আসা মনে হয় বাঞ্ছনীয়। সবার সেটাই চাইবে আমি মনে করি। ’
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তিনটি বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। এটা একটা বিরাট বোঝা। করোনা ভাইরাস তার ওপর যুদ্ধ, এই পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলো যখন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের ওপর আরেকটা বোঝা। সেটা সবার উপলব্ধি করা উচিত। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আরেকটু সক্রিয় হয়ে রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে। তাদের ছেলেমেয়েরা যেন তাদের দেশে মানুষ হতে পারে। এভাবে ক্যাম্পের জীবনযাপন যেন না করতে হয়। তাদেরও তো একটা মানবাধিকার আছে। কাজেই সে ব্যাপারে সবাই একটু সক্রিয় হবে সেটাই আমরা আশা করি। ’
বাংলাদেশের কূটনীতিকদের অর্থনৈতিক কুটনীতির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘শুধু রাজনৈতিক না আমাদের এখন অর্থনৈতিক কূটনীতিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ পৃথিবীটা এখন একটা গ্লোবাল ভিলেজ। আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের সেভাবেই কাজ করতে হবে সবার সঙ্গে মিলে। আমরা কাজ করবো যেন মানুষের উন্নতি হয়। আমরা যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই। ’